প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় অফিসার কম, কিন্তু কাজ বেড়েছে। দিতে হচ্ছে নানা ধরনের ‘বাড়তি’ পরিষেবাও। এই প্রবল চাপের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে কোনও খামতি হলে কপালে জুটছে উপরওয়ালার ‘দুর্ব্যবহার’। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অফিসার সংগঠনগুলির একাংশ এমন অভিযোগ তুলে দাবি করেছে, চাপ নিতে না পেরে কোনও অফিসার চাকরি থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। এমনকি, আত্মহত্যার অভিযোগও উঠছে।
ব্যাঙ্কিং শিল্প মহল তো বটেই, সামাজিক মাধ্যমেও এ নিয়ে চর্চা শুরুর পরে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। এই শিল্প সূত্রের খবর, বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে কাজের পরিবেশ কী রকম, সরকারের নির্দেশে তার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো (ইনটেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি)। সাম্প্রতিক অতীতে এমন কখনও ঘটেছে বলে মনে করতে পারছে না ব্যাঙ্কিং মহল।
সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ব্যাঙ্কের কাজের পরিবেশ ঠিক কী রকম, পরিবেশ খারাপ হয়ে থাকলে তার পিছনে কী কী কারণ থাকতে পারে, সে সবের উপরেই জোর দিচ্ছে আইবি। তবে বিশদে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল কিছু বলতে চাইছে না। মুখে কুলুপ সংগঠনগুলিরও। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছে, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু হওয়ায় অস্বস্তিতে মোদী সরকার। এর উপরে কাজের পরিবেশ নিয়ে চর্চা আরও বাড়লে এবং নতুন আন্দোলন শুরু হলে লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের শাসক দলের অস্বস্তি বাড়বে। তাই আইবি মারফত কাজের পরিবেশ নিয়ে আগাম খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ অফিসার কাজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করার অভিযোগে অধস্তন অফিসারদের অশালীন ভাষায় তিরস্কার করছেন— সম্প্রতি এমন ভিডিয়ো ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। আবার লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় তাঁকেও ঊর্ধ্বতনের কথা শুনতে হয় বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কিং শিল্প সূত্রের খবর, কাজের ‘চাপের’ এই অভিযোগ মূলত অফিসারদের ক্ষেত্রেই ওঠে। কারণ, কর্মীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে বাড়তি কাজ করাতে হলে ‘ওভারটাইম’ দিতে হয় ব্যাঙ্ককে।
অফিসারদের সংগঠন আইবক-এর রাজ্য সম্পাদক শুভজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, তাঁদের সমীক্ষা বলছে বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রতিটি শাখায় গড়ে ২১.১৫ জন কর্মরত এবং কর্মী পিছু ব্যবসার পরিমাণ ১৪.১৩ কোটি টাকা। সেখানেই সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে শাখায় গড়ে কর্মী ৯.০৫ জন হলেও, ব্যবসা ২৬.৫৩ কোটি। তাঁর কথায়, “এমনিতেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রয়োজনের চেয়ে ২০% অফিসার কম। অনেক শাখায় কাগজে-কলমে তিন জন অফিসার বরাদ্দ হলেও বাস্তবে এক জনকে কাজ চালাতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ কাজের লক্ষ্যমাত্রা এতটাই উঁচুতে বাঁধছেন যে, বহু ক্ষেত্রেই তা পূরণ করা অফিসারদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তা ছাড়া ব্যাঙ্কের সাধারণ পরিষেবা ছাড়াও আয় বাড়াতে মিউচুয়াল ফান্ড, বিমার মতো অন্য সংস্থার প্রকল্প বিক্রির জন্য উপরতলার চাপে হিমশিম খেতে হয়। সঙ্গে জনধনের মতো কেন্দ্রের নানা প্রকল্প কার্যকরের দায়িত্ব তো রয়েইছে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সমস্যার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। অনেকে কাজ ছেড়েও দিচ্ছেন।’’
তার উপরে বহু অফিসারকে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় বলে অভিযোগ। অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজ়ড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, “তাঁদের কাজের সময়সীমা বাঁধা নেই। অনেক সময়ে ছুটির দিনেও কাজে আসতে বাধ্য হন।’’ তাঁর দাবি, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে বৈঠকের জন্য রাত পর্যন্ত দফতরে থাকতে ‘বাধ্য’ করা হয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে।
এই অবস্থায় আইবি খোঁজখবর শুরু করায় আলোড়ন তৈরি হয়েছে ব্যাঙ্কিং মহলে। পরিস্থিতি তুলে ধরতে অফিসারদের সংগঠনগুলি সমস্ত তথ্য তৈরি রেখেছে। যাতে কেন্দ্র চাইলে দ্রুত তা জোগানো যায়।