পালিয়ে যাইনি, দাবি মাল্যের

‘‘ভারত ছেড়ে পালাইনি। আত্মগোপন করারও কোনও ইচ্ছা নেই।’’ তাঁর বিদেশ যাওয়া নিয়ে দেশ জোড়া বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার সকালে এক অজ্ঞাত স্থান থেকে টুইট করে এ কথা জানালেন কিংফিশার কর্তা বিজয় মাল্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৬ ০৩:১২
Share:

‘‘ভারত ছেড়ে পালাইনি। আত্মগোপন করারও কোনও ইচ্ছা নেই।’’ তাঁর বিদেশ যাওয়া নিয়ে দেশ জোড়া বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার সকালে এক অজ্ঞাত স্থান থেকে টুইট করে এ কথা জানালেন কিংফিশার কর্তা বিজয় মাল্য।

Advertisement

এ দিন একের পর এক টুইটে মাল্যের দাবি, তাঁর ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন দেশে। যে কারণে প্রায়শই তাঁকে ভারতের বাইরে যেতে হয়। কিন্তু কোনও ভাবেই ভারত ছেড়ে পালাননি তিনি। মাল্য বলেন, ‘‘একজন ভারতীয় সাংসদ হিসেবে দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ভবিষ্যতে তদন্তে সব রকম সাহায্য করব।’’ কিন্তু এর সঙ্গেই তাঁকে ভিলেন বানানোর অভিযোগ তুলে এক হাত নেন সংবাদমাধ্যমকে। নস্যাৎ করেন, তাঁর সম্পদের খতিয়ান দেওয়ার যে-দাবি বিভিন্ন মহলে জোরালো হচ্ছে, তা-ও। কিংফিশার কর্তার মন্তব্য, তা হলে তো বলতে হয় ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাঙ্কগুলি তাঁর সম্পত্তি এবং সংসদে পেশ করা তথ্য খতিয়ে দেখেনি!

তবে মাল্যের ভারত ছাড়া নিয়ে সংসদে কেন্দ্র বনাম বিরোধীদের তরজা অব্যাহত। তাঁকে দেশ ছাড়তে সাহায্য করা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নে শুক্রবারও উত্তাল হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘গত বছর ২৯ জুলাই মাল্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। তার পর ১২ অক্টোবর তাঁকে আটক করার জন্য লুক-আউট নোটিস জারি করে গোয়েন্দা সংস্থাটি। কিন্তু সেই নোটিস ২৩ নভেম্বর সংশোধন করে কেন বলা হল, মাল্য সম্পর্কে শুধু তথ্য দিলেই চলবে? আটক করতে হবে না? কার নির্দেশে এই পরিবর্তন?’’ যদিও সিবিআইয়ের দাবি, প্রথম লুক-আউট নোটিসটি ভুল করে জারি করা হয়েছিল। এর পর মাল্য গত ডিসেম্বরে তিন বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হয়েছিলেন বলেও জানিয়েছে তারা।

Advertisement

সুরজেওয়ালার আরও অভিযোগ: প্রথমত, মাল্যের বিরুদ্ধে বেআইনি টাকা লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে এনফোর্স্টমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), সেবি এবং সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস বা এসএফআইও। এই অবস্থায় সরকারের শীর্ষ সারির ইঙ্গিত না-পেলে সিবিআইয়ের পক্ষে কি লুক-আউট নোটিস উপেক্ষা করা সম্ভব? দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ্কের কনসোর্টিয়াম বকেয়া ঋণ আদায় সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল (ডিআরটি) থেকে কোনও সুরাহা না-পাওয়ায় ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ছিল। তারা ৫ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ দিন হাত গুটিয়ে বসে রইল কেন? সরকার কি জানত না তার আগেই ২ মার্চ মাল্য দেশ ছেড়েছেন। তৃতীয়ত, কেন্দ্র ও মাল্যের মধ্যে কি আড়ালে সমঝোতা চলছে যে, তাঁর থেকে শুধু ঋণের আসল আদায় করা হবে। মকুব হবে সুদ?

রাহুল গাঁধীর প্রশ্নের মুখে পড়ে গত কাল অরুণ জেটলি পাল্টা বলেছিলেন, ‘‘মাল্যের দেশ ছাড়া কিন্তু বফর্স কাণ্ডে অভিযুক্ত ওত্তাভিও কুত্রোচ্চির ভারত ছাড়ার মতো ঘটনা নয়। ভুললে চলবে না মাল্য যখন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন তখন মনমোহন সরকার কেন্দ্রে ছিল।’’ জবাবে সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘১৯৮৯ সালে দেশের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ছিলেন অরুণ জেটলি। পরে বাজপেয়ী জমানায় দেশের আইনমন্ত্রী হন। তখন কুত্রোচ্চিকে দেশে ফেরাতে পারেননি কেন?’’

এ দিকে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় তাঁর মন্তব্যের জন্য কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে এ দিন দাবি করল ব্যাঙ্ক অফিসারদের সংগঠন এআইবিওসি। মাল্য কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর নাম না-করেও গত কাল রাজ্যসভায় আজাদ বলেছিলেন, ব্যাঙ্কের সব কর্মী-অফিসার ঘুষ নিয়ে ধার মঞ্জুর করেন। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ এত বেশি। এই বক্তব্যের বিরুদ্ধেই আজাদকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক সঞ্জয় দাস।

দিনভর এই সব তরজার মধ্যেই মাল্যের বিরুদ্ধে কালো টাকা প্রতিরোধ আইনের আওতায় সমন জারি করেছে ইডি। ১৮ মার্চ বলা হয়েছে হাজিরা দিতে। বৃহস্পতিবারই কিংফিশার এয়ার ও আইডিবিআই ব্যাঙ্কের কর্তাদের আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ৯০০ কোটি টাকা বকেয়া ঋণের মামলায় সমন জারি করেছিল তারা। এ দিন দীর্ঘক্ষণ তাঁদের জেরার পরেই মাল্যের বিরুদ্ধে সমন জারি করে ইডি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা পরিষেবা কর ফাঁকি সংক্রান্ত মামলার শুনানি ২৮ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে বম্বে হাইকোর্ট।

এ দিকে ইউনাইটেড স্পিরিটসের পদ ছাড়তে মাল্যকে ৭.৫ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ডিয়াজিও-র। কিন্তু বিপুল ব্যাঙ্কঋণের কারণে তা এখনই দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে ডিআরটি। তা খতিয়ে দেখার কথাও জানিয়েছে ডিয়াজিও। তবে তাদের দাবি, চুক্তি সইয়ের সময়েই প্রথম পর্যায়ে ৪ কোটি ডলার মাল্যকে দিয়ে দিয়েছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement