জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেই কলতান দাশগুপ্তকে নিয়ে মিছিলে সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন। —নিজস্ব চিত্র।
লালবাজারের কাছে বামফ্রন্টের রাতভর অবস্থানে অংশগ্রহণ করার পরে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে সরাসরি মিছিলেই ফিরে এলেন সিপিএমের যুব নেতা কলতান দাশগুপ্ত। সিপিএম নেতৃত্বের ঘোষণা, কলতান হোক বা যাদবপুরে এর আগে ধৃত রূপসা মণ্ডল, ‘মিথ্যা মামলা’য় যাঁদের ফাঁসানোর অভিযোগ আছে, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই চলবে।
অডিয়ো-ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের মুখপত্রের সম্পাদক কলতান ও সঞ্জীব দাস নামে আর এক যুবক। সেই মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট কলতানের জামিনের নির্দেশ দিয়েছিল, সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিল পুলিশের পদক্ষেপ নিয়েও। জামিনের কাগজপত্র বিধাননগর আদালতে এসে পৌঁছনোর পরে শুক্রবার মুক্ত হয়েছেন কলতান। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিধাননগর আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যাতি সাহা, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্য প্রমুখ। সেখান থেকে কলতানকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামবাজারে মিছিল করেন সিপিএমের যুব ও ছাত্র নেতৃত্ব।
মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এ দিন কলতান বলেছেন, ‘‘জেলে থাকাও বামপন্থী আন্দোলনের একটা শিক্ষা। এই শিক্ষা কাজে লাগবে। লড়াইয়ের ময়দানে ছিলাম, লড়াইয়েই থাকব।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছে বলেও ফের অভিযোগ করেছেন যুব নেতা। মীনাক্ষীর মন্তব্য, ‘‘ন্যায়-বিচারের দাবিতে, চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, ধাপে ধাপে সেই লড়াই এগোবে।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ দিনই বর্ধমানে দাবি করেছেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপির দ্বিমেরু রাজনীতি ভাঙছে। প্রতিবাদী সত্তা জেগে উঠেছে, মানুষের ভয় কেটেছে। তাই নানা রকম অপচেষ্টা, ষড়যন্ত্র চলছে।’’ তাঁরও ঘোষণা, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডে সব দোষী শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত, দুর্নীতির চক্রের পরিচালকদের গ্রেফতারের দাবিতে বামেদের আন্দোলন চলবে।’’
যে অডিয়ো-ক্লিপের সূত্রে কলতান গ্রেফতার হয়েছিলেন, তা সামনে এনেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষ। পুলিশের আগে কী করে এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অন্য দুই ব্যক্তির কথোপকথনের রেকর্ড হাতে পেয়ে গেলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট। কুণাল অবশ্য থামছেন না। তিনি ফের বলেছেন, ‘‘জামিন বিচারের প্রক্রিয়া। কিন্তু চিকিৎসকদের উপরে হামলার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তাতে গলা যে কলতানের নয়, তা সিপিএম বলতে পারেনি।’’
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন শ্যামবাজারে আয়োজিত প্রতিবাদ-সভায় ছিলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএমের সাংসব বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুদিন চট্টোপাধ্যায়, নিশীথ বিশ্বাস, দীপালি ভট্টাচার্য প্রমুখ। বিকাশ বলেন, ‘‘পশ্চিমবাংলায় বারুদের স্তূপ আগে থেকেই ছিল। চিকিৎসক-তরুণীর এই মৃত্যু এবং নজিরবিহীন অত্যাচার দেশলাই কাঠির কাজ করেছে। এই অভূতপূর্ব গণ-প্রতিবাদ তারই প্রতিফলন।’’ সভায় ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’র রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘নির্যাতিতার দেহ যে দ্রুততায় বাড়ির লোককে বাদ দিয়ে দাহ করা হয়, তার জন্য দু’জন ব্যক্তি প্রধানত দায়ী। এর মধ্যে ডিসি (নর্থ)-কে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিধায়ক নির্মল ঘোষকে তদন্তের আওতায় এনে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।’’