পেট্রোলের খুচরো ব্যবসায় পা রাখার দিকে এগোচ্ছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
২০০২ সাল থেকেই মাসে প্রায় ২৫ হাজার কিলোলিটার ইউরো-৪ পেট্রোল তৈরি করে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল)। এত দিন খুচরো বিক্রির অনুমোদন না-থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে তা বিক্রি করত তারা। কলকাতা ও সংলগ্ন শহরাঞ্চলে ওই সংস্থাগুলির পাম্পে যে ইউরো-৪ পেট্রোল বিক্রি হয়, তার অনেকটাই পেট্রোকেমের তৈরি। সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছে পেট্রোলের খুচরো ব্যবসায় নামার অনুমতি চেয়েছিল তারা। অসমর্থিত সূত্রের খবর, সেই অনুমোদনে সই হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ১০০টি পাম্প খোলার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র।
কিন্তু এ নিয়ে এইচপিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন তাঁরা। বলেন, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত তাঁরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কেন্দ্রের কাছ থেকে সরকারি ভাবে কিছু জানতেও পারেনি সংস্থা। তবে সংশ্লিষ্ট মহল সূত্রে যতটুকু জানা যাচ্ছে, তা হল, অনুমতিপত্র হাতে পেলে তার যাবতীয় শর্ত দেখে তবেই ব্যবসার নির্দিষ্ট কৌশল ঠিক করবে সংস্থা।
কেন্দ্রের সাম্প্রতিক নীতি অনুযায়ী, তেল উৎপাদন, শোধন ইত্যাদিতে যে- সংস্থা অন্তত ২,০০০ কোটি টাকা লগ্নি করতে পারবে, তারাই পেট্রোল পাম্প খুলতে লাইসেন্স পাওয়ার হকদার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সেই নিয়মেই যোগ্যতার বেড়া টপকেছে পেট্রোকেম।
২০১৫-র ডিসেম্বরে পেট্রোকেমের সম্পূর্ণ মালিকানা হাতে নেওয়ার পরে গত জুলাইয়ে হলদিয়ায় মিৎসুবিশির কারখানা কিনে নেয় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তখন মিৎসুবিশি কেমিক্যাল জানিয়েছিল, চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সংস্থা চ্যাটার্জি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি-নিউ ইয়র্ককে মিৎসুবিশি কেমিক্যাল কর্পোরেশন পিটিএ ইন্ডিয়ার সিংহভাগ শেয়ার বিক্রি করছে তারা। তার কয়েক মাসের মধ্যে এ বার খুচরো পেট্রোল বিক্রির ব্যবসায় পা বাড়াতে চলেছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
এ রাজ্যে শিল্পায়নের সাম্প্রতিক অতীতে অন্যতম বড় বিনিয়োগ হলদিয়া পেট্রোকেমের শোধনাগার। ২০০০ সালের এপ্রিলে উৎপাদন শুরু হয় সেখানে। রাজ্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এবং টাটা গোষ্ঠীর সহ-বিনিয়োগে পথ চলা শুরু করার পর থেকে বহু ঝড়-ঝাপ্টা গিয়েছে তার উপর দিয়ে। গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে হাঁটছে পেট্রোকেম। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমায় লাভের মুখ দেখাও শুরু করেছে।
হলদিয়া পেট্রোকেম অবশ্য যে পরিমাণ পেট্রোল তৈরি করে, তাতে তাদের পক্ষে উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বেশি দূরে তা বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ, তা খরচে পোষাবে না। এ ছাড়া, তাদের এই ব্যবসার পথে বড় চ্যালেঞ্জ ডিজেলের অনুপস্থিতি। তাদের শোধনাগারে ডিজেল তৈরি হয় না। তাই অনুমতি মিললে তারা বিক্রি করবে শুধু পেট্রোলই।
সংস্থার সামনে আর একটি সমস্যা সম্ভবত পেট্রোলের দাম নির্ধারণ। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বাইরে যে-দুই বেসরকারি সংস্থা (রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এসার) এ রাজ্যে পাম্প চালায়, তাদের নিজস্ব অশোধিত তেলের জোগান রয়েছে। ফলে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভরতা পেট্রোরসায়নের মতো পেট্রোলের ব্যবসার পথেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২০১০-এ পেট্রোলের দর নির্ধারণের ভার ছেড়ে দেওয়া হয় বাজারের হাতে। এই স্বাধীনতার কারণেই পাম্প খুলতে চাইছে তেল সংস্থাগুলি। সেই বাজারে এ বার পা ফেলতে আগ্রহী পেট্রোকেমও।
তথ্য সহায়তা: দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত