Right Investment

শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, না পিপিএফ, সরকারি বন্ড! কোন প্রকল্প আপনার জন্য সঠিক, জেনে নিন

যাঁদের আয় কম, করের আওতায় আসেন না কিংবা কর দেন বড়জোর ৫%, ১০% কিংবা ১৫% হারে, তাঁদের কাছে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং সরকারি বন্ড লগ্নির উপযুক্ত জায়গা হতে পারে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

লগ্নির জায়গা অনেক। তবে নিজের উপযুক্ত কোনটা, তা বেছে নেওয়া খুব সহজ নয়। সনাতন ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহু মানুষ এখন ভাল আয়ের (রিটার্ন) আশায় টাকা ঢালছেন শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায়। এ ছাড়াও টাকা রাখা যায় সরকারি বা বেসরকারি বন্ডে এবং বিভিন্ন সংস্থার আমানত প্রকল্পে। সব প্রকল্পেরই কিছু ভাল-মন্দ আছে। তাই সব প্রকল্প সকলের উপযোগী হয় না। আজ আমরা বিশ্লেষণ করে দেখব, কোন প্রকল্প কাদের জন্যে বেশি উপযোগী হতে পারে।

Advertisement

পুঁজি কম থাকলে যেমন প্রকল্প বাছা মুশকিল, তেমন সমস্যা হয় লগ্নিযোগ্য তহবিল বড় হলেও। যাঁদের তহবিল ছোট, তাঁরা বেশি রিটার্ন খোঁজেন। তবে ঝুঁকির মুখে সেই তহবিলকে ঠেলে দিতে পারেন না। অন্য দিকে যাঁদের তহবিলের আকার বড়, তাঁদের বেশির ভাগই চড়া করের আওতায়। ফলে সুরক্ষিত প্রকল্পে সুদের হার আকর্ষণীয় হলেও, এই সব স্থির আয়ের জায়গাগুলি তাঁদের তেমন নজর কাড়ে না। লগ্নি থেকে যাঁদের নিয়মিত আয় দরকার, তাঁরা খোঁজেন ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের নানা প্রকল্প।

যাঁদের আয় কম, করের আওতায় আসেন না কিংবা কর দেন বড়জোর ৫%, ১০% কিংবা ১৫% হারে, তাঁদের কাছে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং সরকারি বন্ড লগ্নির উপযুক্ত জায়গা হতে পারে। এখন আয় হতে পারে ৭%-৮.২০%। করের দায় নামমাত্র থাকায় নিট আয় ভালই হবে। তবে তা থাকতে হবে মূল্যবৃদ্ধির হারের তুলনায় বেশি। ঝুঁকির দিক থেকেও বেশি নিরাপদ। নতুন প্রজন্মের কিছু ছোট ব্যাঙ্ক মেয়াদি জমায় প্রায় ৯% সুদ দিচ্ছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তপশীলভুক্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানত ‘ডিপোজ়িট ইনশিয়োরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন’ (ডিআইসিজিসি) দ্বারা গ্যারান্টি প্রদত্ত। অর্থাৎ এখানেও কিছু টাকা রাখা যায়। যাঁরা নিয়মিত জমিয়ে লম্বা মেয়াদে বড় তহবিল গড়তে চান, তাঁরা পিপিএফ এবং এনপিএস-এ টাকা রাখতে পারেন। আরও বেশি আয়ের লক্ষ্য থাকলে, নিয়মিত জমানো যায় ফান্ডে এসআইপি পদ্ধতিতে। বড় মেয়াদে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে প্রায় ১৫% রিটার্ন আশা করা যেতে পারে। করের দায়ও কম।

Advertisement

যাঁদের আয় বেশি এবং পুঁজিও বড়, সুদের হার ভাল হলেও তাঁদের স্থির আয় প্রকল্প মনে ধরে না। কারণ, সুদের কম-বেশি তিন ভাগের এক ভাগ কর দিতে হয়। যা থাকে, তার তুলনায় মূল্যবৃদ্ধির হার অনেক সময়েই বেশি হয়। তবে তাঁদের ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ বেশি। তাই অনেককে শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে ঝুঁকতে দেখা যায়। এখানে দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভের প্রথম ১.২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভে কর বসে না। তার উপরে হলে কর দিতে হয় ১২.৫%। ভাল শেয়ার এবং ফান্ডে বড় মেয়াদে লগ্নির ক্ষেত্রে গড়ে বছরে কম-বেশি ১৫% রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। এই কারণেই কিছু বেশি আয়ের লক্ষ্যে বহু মানুষ ব্যাঙ্ক-ডাকঘর থেকে টাকা সরিয়ে শেয়ার এবং ফান্ডে ঢালছেন। বাজারে প্রথম আসা শেয়ার (আইপিও) কিনতে উপচে পড়ছে ভিড়। গত সপ্তাহে বজাজ হাউসিং ফিনান্সের ৬৫৬০ কোটি টাকার আইপিও-তে আবেদন জমা পড়েছে ৬৩.৬১ গুণ। টাকার অঙ্কে জমার পরিমাণ ৩.২৪ লক্ষ কোটি টাকা। আবেদন মূল্যের ভিত্তিতে এটিই দেশের বৃহত্তম আইপিও। এর আগে বৃহত্তম ছিল টাটা টেকনোলজিসের আইপিও (১.৫ লক্ষ কোটি টাকা)।

প্রবীণদের লগ্নিতে সুরক্ষা চাই। দরকার ভাল রিটার্ন, যা মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পেলে ভাল হয়। তাঁদের খুব কম অংশই ঝুঁকি নিতে চান। যে কারণে হালে সুদ কমার আবহ তৈরি হওয়ায় প্রমাদ গুনছেন। ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের প্রকল্পগুলি মূল ভরসা। ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা থাকলে শেয়ার ভিত্তিক অথবা ব্যালান্সড ফান্ডে থোক টাকা রেখে সিস্টেমেটিক উইথড্রয়াল পদ্ধতিতে মাসিক আয়ের ব্যবস্থা করা যায়।নিজস্ব ব্যবসা অথবা স্বনির্ভর পেশায় নিযুক্তরা পিএফ, পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির সুবিধা পান না। তাই প্রথম থেকেই নিয়মিত পিপিএফ, এনপিএস এবং এসআইপি পদ্ধতিতে শেয়ার ভিত্তিক সুবিন্যস্ত ফান্ডে টাকা জমিয়ে গেলে অবসরের আগে বড় তহবিল গড়ে তুলতে পারবেন।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement