রতন টাটাকে নিয়ে বইও লিখেছেন শান্তনু। টুইটার
শান্তনু নায়ডুর বয়স সবে ২৮। তবু ৮৩ বছরের রতন টাটার চোখের মণি এই তরুণ। ব্যবসায় পরামর্শদাতা হিসেবে শান্তনুর উপরে গত কয়েক বছরে ভরসা বেড়েছে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমিরেটস রতনের। বয়সের এতটা ফারাকও তাঁদের মতানৈক্যে নাকি দূরত্ব বাড়াতে পারে না।
আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা শান্তনু একটা সময় পর্যন্ত টাটা গোষ্ঠীর এক জন সাধারণ কর্মী ছিলেন। তবে শান্তনুর পূর্বপুরুষরাও টাটার কর্মী ছিলেন। তাঁদের পরিবারের হিসাবে তিনি টাটায় যোগ দেন পঞ্চম প্রজন্ম হিসেবে। পথ-কুকুরদের প্রতি রতনের ভালবাসার কথাও সকলের জানা। পরে পথের কুকুরদের প্রতি শান্তনুর টান দেখেই কাছে টেন নেন রতন।
নেটমাধ্যমে বহু বার অশীতিপর রতন পথের কুকুরদের নিয়ে পোস্ট করেছেন। তাঁর সংস্থার এক তরুণ কর্মীও একই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে চান জানার পরেই শান্তনুকে কাছে টানেন রতন। শান্তনু শুরুতে ছিলেন টাটা এলক্সি-র কর্মী। তাঁর গাড়িতে একটি কুকুরের ধাক্কা লাগার পরেই পথে থাকা পশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা তৈরি হয় শান্তনুর। তিনি যোগাযোগ করেন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমেরিটাসের সঙ্গে। ওই দুর্ঘটনার পরেই শান্তনু পথের পশুদের গলায় পরানোর জন্য একটি বিশেষ কলার তৈরির কথা ভাবেন যাতে গাড়ির আলো পড়লে তা বিচ্ছুরিত হবে। একটু দূর থেকেই সতর্ক হতে পারবেন চালকেরা। করোনাকালে নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি নিয়মিত ওয়েবিনার চালু করেন শান্তনু। মূলত তরুণদের শিল্পপতি হওয়ার পরামর্শ দেওয়াই ছিল সেই ওয়েবিনারের উদ্দেশ্য। তাতে যাঁরা যোগ দেন তাঁদের থেকে ৫০০ টাকা করে নেন শান্তনু। পথের পশুদের জন্য বিশেষ কলার তৈরির টাকা সংগ্রহ করার জন্য উদ্যোগ নেন তিনি। ‘মোটোপস’ নামে একটি সংস্থাও তৈরি করেন শান্তনু। এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল টাটা গোষ্ঠীর নিউজ লেটারে।
তখনও রতনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। পরে শান্তনু তাঁর বাবার কথাতেই রতনকে একটি চিঠি লেখেন। পথের পশুদের নিয়ে তিনি কী করতে চান সে ব্যাপারে নিজের ভাবনার কথাও জানান। এর পরেই রতন তাঁকে তলব করেন। বৈঠকে বসেন। এখন তাঁরা যাকে বলে ‘হরিহর আত্মা’।
নেটমাধ্যম কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, কাকে বলে হ্যাশ ট্যাগ, কোনটা ট্রেন্ড, কোন ইমোজির কী মানে এ সব রতনকে চিনিয়েছেন শান্তনুই। এখন রতন টাটা কোনও কিছু পোস্ট করলে তা যে ভাবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তার পিছনে শান্তনুর হাত রয়েছে। মাঝে লেখাপড়ার জন্য চাকরি ছেড়ে আমেরিকা চলে যান শান্তনু। কিন্তু রতন টাটা ভোলেননি অসমবয়সী বন্ধুকে। লেখাপড়া শেষ হতেই শান্তনুকে নিজের সহযোগী বানিয়ে নেন। এখন কোন স্টার্টআপে রতন টাটা বিনিয়োগ করবেন সেটাও শান্তুনুর সঙ্গে কথা বলেই নাকি চূড়ান্ত করেন তিনি। রতন টাটার সঙ্গে নিজের কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বইও লিখেছেন শান্তনু। নাম— ‘আই কেম আপন এ লাইটহাউজ’।