দেশের প্রথম বেসরকারি ট্রেন। টুইটার
রেলের নিয়ন্ত্রণাধীন নিগম ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন’ (আইআরসিটিসি) আগেও ট্রেন চালিয়েছে। কিন্তু এই প্রথম সম্পূর্ণ বেসরকারি সংস্থা ‘সাউথ স্টার’ ট্রেন চালানোর বরাত পেয়েছে। প্রথম ট্রেনটি মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূর থেকে যাত্রা শুরু করেছে। মহারাষ্ট্রের সিরিডি ঘুরে শনিবার ফিরবে কোয়ম্বত্তূরে।
সাউথ স্টার যে ট্রেনটি চালাচ্ছে তার ২০টি বগির জন্য রেলকে সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ এক কোটি টাকা দিয়েছে। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এ ছাড়াও দক্ষিণ রেল এই ট্রেনটির জন্য বিভিন্ন খাত মিলিয়ে বছরে মোট ৩.৩৪ কোটি টাকা (জিএসটি ছাড়া) নেবে। বেসরকারি উদ্যোগে এমন আরও অনেক ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। কিন্তু কেমন চুক্তিতে বেসরকারি সংস্থা ট্রেন চালানোর অনুমতি পাবে?
এই সংক্রান্ত নিয়ম অনেক আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিল রেল। তাতে বলা হয়, নিয়মিত রুটে কোনও বেসরকারি সংস্থা ট্রেন চালাতে পারবে না। মূলত রেলের ‘ভারত গৌরব’ প্রকল্পের অধীনে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করতে পারবে বেসরকারি সংস্থা। কোনও রাজ্য সরকারও এমন ট্রেন চালাতে পারবে। তবে সবার ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে রেল শুধু পরিকাঠামো ব্যবহার করতে দেবে।
কোনও সংস্থা দু’বছরের জন্য রেলের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। যে সব পথে রেল ট্রেন চালায় সেখানে বেসরকারি সংস্থার ট্রেন থাকবে না। কোথা থেকে কোথায় ট্রেন যাবে সেটা ঠিক করবে রেল। তবে বরাত পাওয়া সংস্থাই ঠিক করবে পথের কোন কোন স্টেশনে ট্রেনটি থামবে। ভাড়াও ঠিক করতে পারবে নিজেরা। তবে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কি না তার উপরে নজর রাখবে রেল। সব রকম বাতানুকূল বগির পাশাপাশি প্যাকেজ ট্যুরে অংশ নেওয়া যাত্রীরা কোন স্টেশনে ট্রেন থেকে নামবেন, কোথায় এবং কী ভাবে ঘুরবেন, কোন হোটেলে থাকবেন তার সবটাই দেখভাল করতে হবে ওই সংস্থাকে।
বেসরকারি সংস্থা এই পরিষেবা পরিচালনা করলেও ট্রেন চালাবেন রেলের চালকরাই। গার্ড-সহ ট্রেন চালানোর অন্যান্য কাজেও রেলকর্মীরাই নিযুক্ত থাকবেন। তবে ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা, খাওয়াদাওয়া এ সবের জন্য বেসরকারি সংস্থাকেই কর্মী নিয়োগ করতে হবে। যেমন ভাবে সাউথ স্টার যে ট্রেনটি চালাচ্ছে তাতে ব্র্যান্ডেড হাউসকিপিং সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। প্যান্ট্রিতে রান্নার জন্যও শেফ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এমন ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে ইচ্ছামতো বগি ব্যবহারেরও স্বাধীনতা নেই বেসরকারি সংস্থার। রেলের ইনটিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির তৈরি আইসিএফ বগিই ব্যবহার করতে হবে। যাতে ট্রেন ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। এমন কামরাই রেলের থেকে ভাড়া নেওয়া যাবে। রং ও ছবিতে সেই বগিকে সাজাতে পারবে বেসরকারি সংস্থা।
বগি থেকে রেললাইন— সব কিছু ব্যবহারের জন্যই টাকা নেবে রেল। কোন ক্ষেত্রে কী হারে টাকা নেওয়া হবে তা প্রকাশ্যে না আনলেও রেল জানায়, নিয়ম ভাঙলে কড়া জরিমানা হবে বেসরকারি সংস্থার। ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে সারা বছর মিলিয়ে ৯৫ শতাংশ সময়ানুবর্তিতা দেখাতে হবে। তা না হলেই দিতে হবে জরিমানা। ট্রেন দেরিতে পৌঁছলে রয়েছে জরিমানার ব্যবস্থা। সময়ের আগে পৌঁছলেও দিতে হবে জরিমানা। তবে ট্রেন দেরিতে চলাচলের পিছনে অনিবার্য কোনও কারণ থাকলে তা বিবেচনা করবে রেল। কোনও বেসরকারি সংস্থা ঠিক কত টাকা আয় করেছে তা রেলকে জানাতে হবে। তাতে গরমিল থাকলেও জরিমানার নিয়ম রয়েছে রেলের।