প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে, নতুন করে আশঙ্কা বাড়ছে পর্যটনে। নতুন বুকিং তো হচ্ছেই না, উল্টে পর্যটকদের একাংশ আগাম বুকিং বাতিলের টাকা দ্রুত ফেরত চাইছেন। আর এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে চাপান-উতোর বাড়ছে পর্যটন সংস্থা ও এজেন্টদের। সংস্থাগুলির দাবি, হোটেল বা সরকারি লজ এখনই টাকা ফেরাতে চাইছে না। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মতো কেউ কেউ তাতে রাজি হলেও, তারা যে শর্ত দিচ্ছে তাতে এজেন্টদের আর্থিক বোঝা বাড়বে। খারাপ হবে বহু ছোট-মাঝারি সংস্থার হাল।
পর্যটকদের দাবি, রাজ্যের পর্যটন শিল্পের তিন সংগঠন বুকিংয়ের টাকায় এক বছরের মধ্যে ফের ওই স্থানে ভ্রমণের প্রস্তাব দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন বেড়াতে যাওয়াই অনিশ্চিত, তাই তাঁরা নগদ ফেরত চান। পূর্বাঞ্চলে হোটেলগুলির সংগঠন এইচআরএআইয়ের সেক্রেটারি সুদেশ পোদ্দার জানান, সদস্য হোটেলগুলিকে টাকা ফেরাতে বলেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: পারস্পরিক দূরত্বকেই ব্যবসার হাতিয়ার করছে ইন্ডিগো
কিন্তু পর্যটন সংস্থার জাতীয় সংগঠন আইএটিও-র প্রেসিডেন্ট প্রণব সরকারের দাবি, দেশের বেশিরভাগ জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল বা সরকারি লজ টাকা ফেরাচ্ছে না। সরকারি ‘সাফারি’ ও লাক্সারি ট্রেনেও সেই সমস্যা। একই দাবি রাজ্যে দুই পর্যটন সংগঠনের কর্তা নীলাঞ্জন বসু ও সন্দীপ ঘোষের। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যবসা এখন বন্ধ, তাই বুকিংয়ের জন্য আগাম দেওয়া টাকা ফেরত না-পেলে কী ভাবে সংস্থাগুলি তা ফেরাবে?
সংশয়
• ট্রেন বা বিমান চালু হলেও, বছর খানেকের মধ্যে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাববেন কত জন?
• সরকারই বলছে প্রবীণ ও শিশুদের বাড়ির বাইরে না-বেরোতে। সেখানে তাঁদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া কি আদৌ উচিত?
• ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে কাছেপিঠে যাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেটা কত জনের পক্ষে সম্ভব?
পর্যটকদের দাবি
• আপাতত বুকিং বাতিল করাই শ্রেয়।
• ইচ্ছুক পর্যটকদের সেই টাকা ফেরত দিক হোটেল, লজ, পর্যটন ও বিমান সংস্থাগুলি।
• কেউ পরের বছরের সুযোগ নিতে চাইলে, সেই সুবিধাও থাকুক।
হোটেল সংগঠনের নির্দেশ
• বুকিংয়ের টাকা পর্যটকদের ফেরাক হোটেলগুলি।
পর্যটন উন্নয়ন নিগম বলছে
• বুকিং বাতিল হলে, ফেরানো হবে তার টাকা।
• এজেন্ট বুক করলে, পর্যটকদের আগে টাকা ফেরাবেন তিনি।
• সেই নথি দেখে এজেন্টকে টাকা ফেরাবে নিগম।
এজেন্টদের দাবি
• হোটেল, সরকারি লজ ও সাফারির বুকিং বাতিল হলেও, প্রায় কেউই টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
• নিগম লজ বুকিং বাতিল করলেও, আগে এজেন্টকে টাকা ফেরাতে বলছে।
• সব মিলিয়ে নগদের অভাবে বোঝা চাপছে ছোট-মাঝারি সংস্থার উপর।
আবার নিগমের টাকা ফেরত নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এজেন্টদের দাবি, বুকিংয়ের জন্য তাঁদের প্রত্যেককে নিগমের কাছে নিজস্ব ওয়ালেটে আগাম টাকা রাখতে হয়। নিগম জানায়, ২৩ মার্চের পরে পর্যটক নিজে বুকিং বাতিল করলে নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট টাকা কেটে বাকিটা ওয়ালেটে ফেরানো হবে। নিগমের বাতিল করা বুকিংয়ের টাকা আগে দেবেন এজেন্ট। প্রমাণ দেখে ওয়ালেটে টাকা ফেরাবে নিগম। আর ১ জুলাই ওয়ালেটের টাকার অর্ধেকও এজেন্টরা ভাঙাতে পারবেন। সংগঠনগুলির দাবি, এতে নগদের সমস্যা মিটবে না।
নিগমের এমডি কৌশিক ভট্টাচার্যের যদিও দাবি, এজেন্টদের সমস্যার কথা ভেবে পরে ঠিক হয়েছে, বুকিং বাতিলের টাকা ওয়ালেটের বদলে দু’কিস্তিতে তাঁদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। তাঁর আশ্বাস, এজেন্ট আগে টাকা মেটাতে খুব অসুবিধায় পড়লে তা খতিয়ে দেখা হবে। যদিও নীলাঞ্জনবাবু ও সন্দীপবাবুর দাবি, এখনও নিয়ম বদলের নির্দেশিকা তাঁরা পাননি। তাঁদের দাবি, বরং পর্যটকদেরই সরাসরি সেই টাকা ফেরাক নিগম।
আর এই বিতর্কে ঢুকতে নারাজ পর্যটকেরা বলছেন, রফাসূত্র খুঁজতে আলোচনায় বসুক সব পক্ষ। উদ্যোগী হোক সরকারও।