ছবি সংগৃহীত।
উৎসবের মরসুমে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে কিছুটা। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত হিসেবে তাকে গুনতিতেও রাখছে কেন্দ্র। কিন্তু গাড়ির শো-রুমের ভিড় উৎসবের মরসুম ফুরোলে বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে শিল্প ধন্দেই। আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে জাপানি বহুজাতিক হোন্ডা কারস ইন্ডিয়ার (এইচসিআইএল) ভারতে দু’টি কারখানার মধ্যে একটিতে তালা ঝোলানোর সিদ্ধান্ত। চাহিদার অভাবেই যে এই পদক্ষেপ, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট সংস্থার বার্তায়। গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের সুরে উপদেষ্টা সংস্থা নোমুরার রিপোর্টও বলছে, ২০১৮-১৯ সালে বিক্রির অঙ্ক ২০২২-২৩ সালের আগে ফের ছুঁতে পারবে না যাত্রিগাড়ির ব্যবসা। দু’চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে লাগতে পারে আরও বেশি সময়।
চলতি সপ্তাহে হোন্ডা গ্রেটার নয়ডার কারখানায় গাড়ি তৈরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। বন্ধ হচ্ছে তাদের সিআর-ভি এবং সিভিক মডেল দু’টি তৈরিও। নয়ডার কারখানাতেই এত দিন ধরে যেগুলি বানানো হত। সেখানে তাদের অন্য সব (মূলত প্রশাসনিক, বিপণন, গবেষণা ইত্যাদি) কাজকর্ম অবশ্য চালু থাকবে। ১৯৯৭ সালে তৈরি এই কারখানাটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১ লক্ষ। পরে তাপুকারায় বছরে ১.৮০ লক্ষ গাড়ি তৈরির কেন্দ্র গড়ে তারা। কিন্তু গত বছর অর্থনীতির ঝিমুনিতে বিক্রি ধাক্কা খাওয়ার পরে করোনার জেরে আরও অন্তত তিন বছর পিছিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে গাড়ি শিল্প। এই পরিস্থিতিতে দু’টি কারখানা চালিয়ে যাওয়া হোন্ডার পরিচালন ব্যবস্থার দক্ষতায় ধাক্কা দিতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট-সিইও জি নাকানিশি-ও বলেন, ‘‘তিন মাসে বিক্রি কিছুটা বাড়লেও, বাজার অনিশ্চিত। এর মধ্যেও সংস্থার ব্যবসায়িক দক্ষতা ধরে রাখতেই ওই সিদ্ধান্ত। তবে বাজারের পুনরুজ্জীবন নিয়ে আমরা আশাবাদী।’’ সংস্থার যদিও দাবি, তাপুকারার কারখানা যন্ত্রাংশ জোগানো সহজ সংলগ্ন এলাকাতেই সহযোগী সংস্থাগুলি থাকায়। গ্রেটার নয়ডার কারখানার কিছু কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দিয়েছে হোন্ডা। আর কয়েকজন তাপুকারায় বদলি হয়েছেন।
নোমুরার অন্যতম কর্তা অসীম শর্মা বলছেন, আগামী অর্থবর্ষ থেকেই দেশের গাড়ি বাজার বৃদ্ধির মুখ দেখবে। তবে ২০১৮-১৯ সালে যত যাত্রিগাড়ি বিক্রি হয়েছিল, ফের সেখানে পৌঁছতে বছর দু’য়েক লাগতে পারে। ততদিনে আরও গাড়ি কারখানা বন্ধ করতে হবে না তো, এই প্রশ্নই বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।
ব্যবসার হাল
• গত ১০ বছরের মধ্যে সব থেকে খারাপ।
• অর্থনীতির ঝিমুনিতে গত অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক থেকেই কমতে শুরু করেছিল গাড়ির বিক্রি।
• এর উপরে করোনার দাপটে গত এপ্রিল-জুনে সঙ্কোচন দাঁড়ায় ৭৫%।
• হালে উৎসবের মরসুমে যাত্রিগাড়ির বিক্রি কিছুটা বাড়লেও, বাণিজ্যিক ও দু’চাকার গাড়ির চাহিদায় ভাটা বহাল।
• তবে আশঙ্কা যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রিও ২০১৮ সালের জায়গায় পৌঁছতে অন্তত ৩-৪ বছর সময় নেবে। তা-ও যদি জিডিপি ১০-১২% হারে বাড়ে। ফলে আশা পূরণ নিয়ে সন্দেহ আছে।
• চলতি অর্থবর্ষে গাড়ি বিক্রি ২৬-৪৫% কমতে পারে।