প্রতীকী ছবি।
তেলের চড়া দামের জেরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ঝাঁঝ বহাল রইল। সোমবার সরকারি পরিসংখ্যান জানাল, মে মাসের পরে জুনেও সারা দেশে তার হার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্ধারিত সহনসীমার (৪%; +২%/-২%) থেকে বেশি, ৬.২৬%। আগের মাসে ছিল ৬.৩%। শুধু জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিই ১২.৬৮ শতাংশে উঠে গিয়েছে।
জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এই উদ্বেগে রাশ টানতে পারেনি এ দিনই প্রকাশিত মে মাসে ২৯.৩% হারে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির সরকারি হিসেবও। কারণ সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই গত বছর একই সময় শিল্পে উৎপাদনের পরিসংখ্যান তুলে দাবি করছেন, সে বার আঁতকে ওঠার মতো সঙ্কোচন দেখেছিল অর্থনীতি। প্রায় ৩৩%। সেই নিচু ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে তুলনামূলক পরিসংখ্যান দিলে, উৎপাদন যত কমই হোক দৈত্যের মতো দেখাবে। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ স্পষ্ট, অন্তত এই উৎপাদনের হার দেখে এখনই বলা যাবে না। ফলে অস্বস্তি বহাল এখানেও।
তবে মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেখে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছেন, বাজারে গেলে যে ভাবে আনাজ, মাছ, মাংস, দুধ-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দামে পকেটে ছেঁকা খাওয়ার অভিজ্ঞতা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের, তাতে জুনের হার তাঁদের কিছুটা অবাকই করেছে। কারণ, তেলের দাম লাগাতার বাড়ছে। পণ্য পরিবহণের খরচ বাড়ছে। এমন নয় যে দাম কমানোর কোনও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তার উপরে কিছু কিছু জায়গায় বিধিনিষেধ পুরো ওঠেনি।
ফলে দুই পরিসংখ্যানের কোনওটিতেই স্বস্তির কারণ নেই। বস্তুত, মাস কয়েক আগে পরিসংখ্যান মন্ত্রকই জানিয়েছিল, করোনাকালে সূচকের তুলনা টেনে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা ঠিক নয়।
সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছরের ২৫ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউন কার্যকর হয়। যাতে ধাক্কা খায় রোজগার। এর ফলে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমলেও পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকে। ফলে মূল্যবৃদ্ধিতে তেমন লাগাম পরানো যায়নি। এ বছরের গোড়ায় তা কিছুটা কমলেও অর্থনীতিবিদদের একাংশ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির সামঞ্জস্য কম। গত মাসেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.০১% থেকে বেড়ে ৫.১৫% হয়েছে। দাম বেড়েছে তেল এবং ফ্যাট জাতীয় পণ্য (৩৪.৭৮%), ফলের (১১.৮২%)। আনাজের দাম সামান্য কমেছে (০.৭%)। অনেকের বক্তব্য, এই অবস্থায় অগস্টের বৈঠকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে ঋণনীতি বদলানো কঠিন।