কর-কোপ: প্রতিমা তৈরি হয়েও পড়ে কুমোরটুলিতে। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর আগে জিএসটি-র কোপে এ বার কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পীরাও।
জুনে কুমোরটুলি থেকে ৩০টি প্রতিমার বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুলাই শুরু হয়ে গেলেও প্রতিমা ওই সব দেশে পৌঁছয়নি। ফলে কপালে ভাঁজ পটুয়াপড়ার শিল্পীদের।
মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হওয়ার জন্য গত এক মাস যাবৎ তাঁরা বিদেশে জাহাজপথে প্রতিমা পাঠাতে পারছেন না। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক রঞ্জিৎ সরকারের অভিযোগ, ‘‘যে-সমস্ত এজেন্ট মারফত প্রতিমা পাঠাই, তাঁরাই জানিয়েছেন, জিএসটি-র আওতায় এখনও শিপিং বিল চূড়ান্ত হয়নি। তাই আপাতত প্রতিমা বিদেশে পাঠানো যাচ্ছে না। জুনে ৩০টি প্রতিমা জাহজপথে যাওয়ার কথা ছিল।’’ শিল্পীরা যে-সব সংস্থার মাধ্যমে প্রতিমা বিদেশে পাঠান, তাদের অন্যতম ম্যাকনেলস শিপিং প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার সৌম্য সেন একই সুরে বলেন, ‘‘জুনের শেষ থেকেই কোনও প্রতিমা বিদেশে পাঠাতে পারিনি। আশা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’
নতুন কর জমানায় বিদেশে প্রতিমা পাঠাতে শিল্পীদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে বলেও আশঙ্কা শিল্পীদের। রঞ্জিৎবাবু বলেন, ‘‘জিএসটি নিয়ে আমরা পুরোপুরি অন্ধকারে। আয়ের জন্য পুজোর মরসুমের দিকেই আমরা তাকিয়ে থাকি। তার উপর অতিরিক্ত করের টাকা গুনতে হলে তো খুব মুশকিল।’’ মৃৎশিল্পীদের আরও অভিযোগ, প্রতিমা বিদেশে পাঠাতে গেলে জিএসটি নম্বর নিতে হবে। কী ভাবে তা পাওয়া যাবে, তা তাঁরা জানেন না। এ ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা পরোক্ষ কর বিশেষজ্ঞ সৌরভ চন্দ্রের দাবি, রফতানির জন্য জিএসটি নম্বর নেওয়া বাধ্যতামূলক।
প্রসঙ্গত, মৃৎশিল্পী মিন্টু পালের দুটি প্রতিমা গত ২২ জুন আমেরিকা ও ফ্রান্সে যাওয়ার কথা ছিল। একই অবস্থা শিল্পী সুবল পালের, যাঁর একটি প্রতিমা নিউ ইয়র্ক, আর একটি লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। মিন্টু পালের কথায়, ‘‘যে-সংস্থার মাধ্যমে বিদেশে প্রতিমা যাওয়ার কথা, তারাই জানিয়েছে, জিএসটি-র জন্য আপাতত দেরি হচ্ছে।’’
এ দিকে রফতানির জন্য তৈরি প্রতিমা দিনের পর দিন ছোট্ট স্টুডিওয় রাখতে গিয়ে বাকি প্রতিমা তৈরিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ শিল্পীদের। শিল্পী বাবু পালের আক্ষেপ, ‘‘শিল্পীদের জন্য নতুন স্টুডিও তৈরির কাজ এখনও বিশবাঁও জলে। এ ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া প্রতিমা ভাঙাচোরা স্টুডিওয় রাখাটাও ভয়ের।’’