মাটির নীচে জল স্তর নামতে থাকলে চাষির আয় দ্বিগুণের ‘স্বপ্ন’ যে অধরা থাকবে, তা জানেন নরেন্দ্র মোদী। পানীয় জল জোগানো ছাড়াও সমস্যায় পড়বে শিল্প, এমনকি পরিষেবাও। কিন্তু এখন ‘গেল গেল’ রব উঠলেও, এ নিয়ে সতর্ক হওয়ার স্পষ্ট ছবি অন্তত মোদী জমানার প্রথম পাঁচ বাজেটে নেই।
চাষে জল বাঁচানো বা ভূগর্ভস্থ জলস্তর বৃদ্ধির প্রসঙ্গ যে ওই বাজেটে ওঠেনি, তা নয়। যেমন, জল সংরক্ষণে ২০১৬-১৭ সালে ঢালা হয় ৬,০০০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ সালে প্রতি বিন্দু জলে বেশি ফসল ফলানোর শপথ নিয়ে রাখা হয় ৫,০০০ কোটি। জোর দেওয়া হয় ক্ষুদ্র সেচেও। কিন্তু অনেকের মতে, তড়িঘড়ি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ প্রকল্পে যে ভাবে মাটি থেকে জল তোলার সুবিধায় মোটা বরাদ্দ থেকেছে, তাতে কার্যত উল্টো পথে হাঁটা হয়েছে।
ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানো, বৃষ্টির জল ধরার মতো ইউপিএ জমানার প্রকল্পগুলি মোদীর আমলেও হয়তো আছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে বরাদ্দ এসেছে অন্য খাতে মিশে। ফলে আদতে কত জুটেছে, তা অন্তত বাজেট বক্তৃতায় অস্পষ্ট। ইউপিএ জমানা থেকে জমিতে যথেচ্ছ টিউবওয়েল ও সস্তায় বিদ্যুতের যুগলবন্দিও শুষেছে জলকে। চাকা ঘোরানোর চেষ্টার দিশা এ বার বাজেটে থাকবে কি? নজর সে দিকেই।
বছর গড়িয়ে...
• মাটির তলায় জল ফেরানোর ব্যবস্থায় (ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট) ইউপিএ জমানার শেষ দুই বাজেটে (২০১৩-১৪ এবং ২০১২-১৩) বরাদ্দ ৫,৩৮৭ ও ৩,০৫০ কোটি টাকা।
• প্রথম দফার মোদী সরকারের শেষ বাজেটে (২০১৮-১৯) তা ২,১৪৬ কোটি।
ধোঁয়াশা যেখানে...
• ২০১৪-১৫ সালের বাজেট ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়াতে ২,১৪২ কোটি দিয়েছে। অথচ তাতেই ক্ষেতে জল দিতে ১ লক্ষ সৌর পাম্প বসানোয় বরাদ্দ ৪০০ কোটি। যার বড় অংশ জল তুলবে মাটি থেকে।
• ২০১৮-১৯ সালেও বাজেটে ‘ওয়াটারশেড ডেভেলপমেন্ট’ ও ক্ষুদ্র সেচে ২,১৪৬ ও ২,০০০ কোটি দেওয়ার কথা রয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ প্রকল্পে ৯৬টি জেলায় মাটির তলার জল তুলতে বরাদ্দ ২,৬০০ কোটি। জোর দেওয়া হয় সৌর পাম্পেও।
সামনে প্রশ্ন
• জল সঙ্কট না মেটালে ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত ৬% ধাক্কা খাবে জিডিপি। অবস্থা সামালের দিশা বাজেট দেবে?
• ভূগর্ভস্থ জল তোলে বোতলবন্দি পানীয় জল ও নরম পানীয় তৈরির সংস্থা, বস্ত্র, নির্মাণের মতো শিল্প। জল বাঁচাতে কী হবে কৌশল?
• চালে কেজিতে ৩০০ লিটার জল লাগে। পঞ্জাবে কিছু চালে লাগে ৪,০০০ লিটার! চাষের ঘরানা বদল ও কৃষি বৈচিত্র বৃদ্ধির কথা ভাবা হবে কি?
• হোটেল, ক্লাবে সুইমিং পুল থেকে বাথটাব, লাগে বিপুল জল। তারা কি আগামী দিনে চড়া দর গুনবে?