প্রতীকী ছবি
কোনও সংস্থা ব্যাঙ্ক থেকে ধার নেওয়ার সময় তার গ্যারান্টর হিসেবে যে ব্যক্তির নাম থাকবে, সংস্থাটি ধার শোধ করতে না-পেরে দেউলিয়া হলে তিনিও রেহাই পাবেন না। শুক্রবার এই বার্তাই দিল সুপ্রিম কোর্ট। এক রায়ে শীর্ষ আদালত বলল, সংস্থা ঋণ খেলাপি হলে তার বিরুদ্ধে তো দেউলিয়া আইনে মামলা হবেই। একই সঙ্গে টাকা আদায়ের ওই প্রক্রিয়ায় দেউলিয়া আইনেই মামলা চলবে গ্যারান্টর হিসেবে নাম থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধেও। এমনকি দেউলিয়া আইন অনুযায়ী, ওই রুগ্ণ এবং ধার শোধে অক্ষম সংস্থাটি পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা অনুমোদিত হওয়ার পরেও তাঁর দায় থেকে নিষ্কৃতি পাবেন না ওই ঋণের গ্যারেন্টর ব্যক্তিরা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এর ফলে ভারতের প্রথম সারির বেশ কিছু শিল্পপতি দেউলিয়া আইনে মামলার মুখে পড়বেন। কারণ, তাঁদের ঋণখেলাপি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দেউলিয়া আইনি প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া, আগামী দিনে কেউ কোনও ঋণে গ্যারান্টর হওয়ার আগেও দু’বার ভাববেন। যা ভবিষ্যতে ঋণ খেলাপ আটকানোর জরুরি পথ হতে পারে বলে মনে করছে তারা।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বরে একই কথা বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল কেন্দ্র। সেখানে বলা হয়েছিল, কোনও সংস্থা দেউলিয়া হয়ে এনসিএলটি-তে যাওয়ার পরে তার ঋণ মেটানোর পরিকল্পনা অনুমোদিত হতেই পারে। কিন্তু তখন ঋণের গ্যারান্টর হিসাবে সংস্থার কোনও প্রোমোটার বা ডিরেক্টর থাকলেও, তাঁর দায় থেকেই যাবে। অর্থাৎ সংস্থা বিক্রির টাকায় ঋণের পুরোটা শোধ না-হলে, বাকি টাকা মেটানোর দায় থেকে ওই গ্যারান্টার ব্যক্তি রেহাই পাবেন না। ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা বকেয়া আদায়ের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের রায়ে ওই নির্দেশই বহাল রইল। কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ৭৫টি আবেদন আদালতে জমা পড়েছিল। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন অনিল অম্বানী, কপিল ওয়াধওয়ান, সঞ্জয় সিঙ্ঘল, বেণুগোপাল ধুতের মতো শিল্পপতিরাও। অন্যতম আবেদনকারী ললিত কুমার জৈনের করা মামলার প্রেক্ষিতেই শুক্রবার রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং এস রবীন্দ্র ভাটের বেঞ্চ।
বেঞ্চ বলেছে, ঋণের গ্যারান্টরের সঙ্গে পৃথক চুক্তি হয়। তাই এর সঙ্গে সংস্থার পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা অনুমোদনের যোগ নেই। বিচারপতি ভাট বলেন, ‘‘রুগ্ণ সংস্থার পুনরুজ্জীবন প্রস্তাবে সায়ের মানে খেলাপি ঋণে গ্যারান্টি দিয়ে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তির দায় থেকে মুক্তি নয়।’’
এ দিনের রায়ে দেউলিয়া আইনে পাওনাদারদের টাকা ফেরত পাওয়ার জমি আরও পোক্ত হল, মনে করছেন ওই আইন বিশেষজ্ঞেরা। তেমনই বিশেষজ্ঞ উজ্জয়িনী চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এই রায়ের পরে ঋণের টাকার যে অংশ অনেক সময়েই ফেরত পায় না (হেয়ার কাট) ঋণদাতারা, তার পরিমাণ কমবে।’’