৫ শতাংশে বন্দি জিডিপি বৃদ্ধি

আজ মোদী সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানাল, চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে আটকে থাকতে চলেছে। গত বছর অর্থনীতির হার খারাপ হলেও বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ ছুঁয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩২
Share:

তলানিতে নামার নতুন নতুন রেকর্ড করতে চলেছে দেশের অর্থনীতি।

Advertisement

আজ মোদী সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানাল, চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে আটকে থাকতে চলেছে। গত বছর অর্থনীতির হার খারাপ হলেও বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ ছুঁয়েছিল। বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার পরে গত ১১ বছরে দেশের বৃদ্ধির হার এত তলানিতে নামেনি। মোদী জমানায় জিডিপি মাপার পদ্ধতি বদলে দেওয়ার পরে বৃদ্ধির হার এত খারাপ হয়নি। কারখানার উৎপাদন, লগ্নির ক্ষেত্রেও ছবিটা এত খারাপ হতে চলেছে যে, সেখানেও অনেক রেকর্ড ভেঙে যাবে।

অর্থনীতির এই করুণ ছবি ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটের আগে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে চলেছে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা, গোটা দেশের নজর এখন সেই জেএনইউ-এর দিকে। কিন্তু জেএনইউ-এর প্রাক্তনী অর্থনীতিকে কী ভাবে চাঙ্গা করবেন, সেটা অনেক দূরের কথা। গত জুলাইয়ে পেশ করা তাঁর প্রথম বাজেটের অঙ্ক মেলাবেন কী করে, সেটাই প্রশ্ন।

Advertisement

আজ পরিসংখ্যান মন্ত্রক প্রথম আগাম অনুমানে জানিয়েছে, চলতি বছরে মূল্যবৃদ্ধি-সহ জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৭.৫ শতাংশ। অথচ গত জুলাইয়ের বাজেটে নির্মলা অনুমান করেছিলেন, মূল্যবৃদ্ধি-সহ জিডিপি ১২ শতাংশ হারে বাড়বে এবং এ বছর জিডিপি প্রায় ২১১ লক্ষ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছবে। রাজকোষ ঘাটতিকে সেই জিডিপি-র ৩.৩ শতাংশে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিলেন তিনি।

অর্থনীতির দুশ্চিন্তা


• বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার পরে এত খারাপ দশা হয়নি
• কারখানার উৎপাদন, বিনিয়োগে বৃদ্ধির হার ১৫ বছরে সবথেকে খারাপ
• নতুন যন্ত্রাংশে পুঁজির বৃদ্ধি দু’দশকে সর্বনিম্ন
• রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা কঠিন
• আমজনতার আয়ও বাড়বে অপেক্ষাকৃত কম হারে

কিন্তু আজ পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বছর জিডিপি ২০৪ লক্ষ কোটি টাকাতেই আটকে থাকবে। মূল্যায়নকারী সংস্থা কেয়ার রেটিংস-এর মতে, আর সব কিছু এক থাকলে সোজা হিসেবে রাজকোষ ঘাটতি বেড়ে ৩.৪৪ শতাংশে পৌঁছবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যবৃদ্ধি-সহ জিডিপি যদি মাত্র ৭.৫ শতাংশ হারে বাড়ে, তার অর্থ হল, আমজনতার আয় খুব বেশি হারে বাড়বে না। সরকারের রাজস্ব আয়ও বিশেষ বাড়বে না। ফলে রাজকোষ ঘাটতি ৩.৫ শতাংশে পৌঁছলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

পরিসং‌খ্যান মন্ত্রকের অনুমান, চলতি বছরে কারখানার উৎপাদন বাড়বে মাত্র ২ শতাংশ হারে। গত বছর যা ছিল ৬.২ শতাংশ। বিনিয়োগ বাড়বে মাত্র ০.৯৭ শতাংশ হারে। গত ১৫ বছরে এত খারাপ পরিস্থিতি হয়নি। অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে নতুন যন্ত্রাংশে লগ্নি ০.৫ শতাংশ কমবে। গোটা বছরে বাড়বে ১ শতাংশ হারে। যা গত বছর ১০ শতাংশ ছিল। গত দু’দশকে নতুন যন্ত্রাংশে পুঁজি এই হারে কমেনি। মোট লগ্নির পরিমাণ জিডিপি-র এক তৃতীয়াংশ থেকে চার ভাগের এক ভাগে নেমে আসতে চলেছে। জিডিপি থেকে করের পরিমাণ বাদ দিলে যা পড়ে থাকে, সেই জিভিএ থেকে অর্থনীতির ছবিটা আরও ভাল বোঝা যায়। সেখানেও বৃদ্ধি ৪.৯ শতাংশে আটকে থাকছে বলে অনুমান।

আর ভবিষ্যতের ছবি? সেখানেও রুপোলি রেখার দেখা নেই। চলতি অর্থ বছরের গোড়া থেকেই মূল্যবৃদ্ধির হার তলানিতে। এপ্রিল থেকে নভেম্বরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ১.৪ শতাংশ। গোটা বছরে মূল্যবৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশের মতো থাকবে বলে আজ পরিসংখ্যান মন্ত্রক আঁচ করছে। মূল্যবৃদ্ধির হার এত কমের অর্থ, বাজারে চাহিদা নেই। সরকারি অনুমান বলছে, এ বছরে ব্যক্তিগত কেনাকাটার খরচে বৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশে আটকে থাকছে। যা গত বছরের ৮.১ শতাংশের তুলনায় বেশ কম।

বাজারে চাহিদা না থাকলে নতুন লগ্নি আসবে কী ভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও গত সোমবারই দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের কাছে লগ্নি করার আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র অর্থনীতিবিদ এন আর ভানুমূর্তির কথায়, ‘‘লগ্নি বাড়াতে সরকার কর্পোরেট কর কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে কতখানি লাভ হয়, সেটা দেখা দরকার।’’

মূল্যায়নকারী সংস্থা ইক্রা-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের মতে, ‘‘রবি ফসলের উৎপাদন বাড়লে গ্রামের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারে। তা থেকে অর্থনীতি কিছুটা চাঙ্গা হতে পারে। বিদ্যুৎ খরচ যে ভাবে কমছিল, তা-ও বন্ধ হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে।’’ কিন্তু লগ্নির হাত ধরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলছে না বলেই অনেক অর্থনীতিবিদের মত।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমেছিল। পরের তিন মাসে তা ৪.৫ শতাংশে নেমে যায়। তখনই আশঙ্কা হয়েছিল, গোটা বছরের বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে আটকে থাকবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রথমে ৬ শতাংশের বেশি বৃদ্ধির পূর্বাভাস করলেও তা কমিয়ে ৫ শতাংশে নিয়ে আসে। ভানুমূর্তির মতে, ‘‘পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অনুমানে একমাত্র আশার দিক হল, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৃদ্ধির হার প্রথমার্ধের তুলনায় সামান্য হলেও ভাল হবে।’’

বৃদ্ধির হার যে ৫ শতাংশের নিচে নেমে যাচ্ছে না, তার একমাত্র কারণ পরিষেবা ক্ষেত্র। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের মতে, পরিষেবা ক্ষেত্র ৬.৮ শতাংশ হারে বাড়বে। যদিও এই ক্ষেত্রের ছবিও গত দু’টি অর্থ বছরের তুলনায় বেশ খারাপ।

পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এখন একমাত্র সহায় সরকারি খরচ। যা চলতি বছরে ১০ শতাংশের বেশি হারে বাড়বে। কিন্তু অর্থনীতির ঝিমুনির কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ে টান পড়েছে। ফলে সরকারি খরচে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। অর্থ বর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে সরকারি খরচে বৃদ্ধির হার কমে আসবে বলেই অনুমান পরিসংখ্যান মন্ত্রকের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement