প্রতীকী ছবি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মূল্যবৃদ্ধি-মুদ্রাস্ফীতির চাপে কমছে হাতে নগদের পরিমাণ। ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে ঠেকছে মধ্যবিত্তের। এই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতেই কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে আয়করের হার কমানোর প্রস্তাব দিল বিশেষ টাস্ক ফোর্স। যদিও এখনও পর্যন্ত এটা প্রস্তাবের আকারেই রয়েছে, সরকার তা মানবে কি না, সে বিষয়ে কোনও জবাব বা ইঙ্গিত মেলেনি কেন্দ্রের তরফে। তবে সরকার যদি মেনে নেয়, তা হলে মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশের করদাতাদের অনেকটাই স্বস্তি মিলবে।
৫৮ বছরের পুরনো আয়কর আইন খতিয়ে দেখতে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেশন-এর সদস্য অখিলেশ রঞ্জনের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে কেন্দ্র। গত ১৯ অগস্ট টাস্ক ফোর্স রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। কিন্তু, সরকারের তরফে সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রক সূত্রে খবর, কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব জমা দিয়েছে টাস্ক ফোর্স।
বর্তমান আয়কর কাঠামোয় প্রকৃতপক্ষে করযোগ্য আয় শুরু হয় ৫ লক্ষ টাকা থেকে। শুরুতেই সেই করের হার ২০ শতাংশ। সূত্রের খবর, এই হার ২০ থেকে অর্ধেকে নামিয়ে এনে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব জমা পড়েছে অর্থ মন্ত্রকে। বর্তমান কর কাঠামোয় এই ১০ শতাংশ হারে করের কোনও সংস্থানই নেই। অর্থাৎ মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশের করদাতাদের অনেকটাই স্বস্তির প্রস্তাব রয়েছে। আবার সর্বোচ্চ বিত্তবানদের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ হারে নতুন কর কাঠামোর প্রস্তাবও দিয়েছে টাস্ক ফোর্স। এমনটাই সূত্রের খবর। বর্তমানে ৩০ শতাংশই সর্বোচ্চ আয়করের হার।
ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, টাস্ক ফোর্সের প্রস্তাব— বছরে যাঁদের আয় ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তাঁদের করের হার হোক ১০ শতাংশ। ১০ থেকে ২০ লক্ষ পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ২০ লক্ষ থেকে ২ কোটি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ এবং ২ কোটির বেশি আয় করলে ৩৫ শতাংশ করের প্রস্তাব দিয়েছে টাস্ক ফোর্স।
বর্তমান কর কাঠামো কী রয়েছে? ২.৫ লক্ষ পর্যন্ত আয় করমুক্ত, অর্থাৎ কোনও কর দিতে হয় না। আড়াই লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ পর্যন্ত করের হার ৫ শতাংশ। তবে এই হারে কর জমা দেওয়ার পর সমপরিমাণ করের টাকা ফেরত পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে কোনও কর দিতে হয় না। এই দুই ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়নি টাস্ক ফোর্স। এর পর বছরে ৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ পর্যন্ত আয়ের উপর ২০ শতাংশ কর দিতে হয়। ২০ লক্ষ থেকে ২ কোটি পর্যন্ত আয়করের হার ৩০ শতাংশ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কিন্তু ২ কোটির বেশি আয় হলে করের সঙ্গে যে সারচার্জ দিতে হয়, সেটা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে টাস্ক ফোর্স। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, সদস্যদের মতে সারচার্জ কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। তাই সারচার্জ তুলে এই উচ্চবিত্ত শ্রেণির জন্য অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে কর চাপানোর প্রস্তাব রয়েছে রিপোর্টে। অর্থাৎ মধ্যবিত্তের একটা অংশের করদাতাদের যেমন অনেকটাই স্বস্তির প্রস্তাব রয়েছে টাস্ক ফোর্সের প্রস্তাবে, তেমনই উচ্চবিত্তদের করের বোঝা আরও বাড়ানোর সুপারিশও রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘নভেম্বর-ডিসেম্বরেই ভারত-পাক যুদ্ধ’! কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের মন্ত্রী
আরও পড়ুন: ‘আমরা জানি কী করতে হবে’, ৩৭০ বিলোপ নিয়ে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের, মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চে
টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির হার ক্রমাগত বেড়ে চলা, টাকার দাম পড়ে যাওয়া, তেলের দাম বৃদ্ধি— এ সবের চাপে মধ্যবিত্তের পকেটে টান পড়ছে। ফলে আয় একই থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ক্রয়ক্ষমতা কমছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যাতে অন্তত মধ্যবিত্তের একটা অংশের করদাতাদের কিছুটা সুরাহা হয়।