প্রতীকী ছবি।
রাজস্বের ঝুলি ভরতে ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিপুল অঙ্কের ডিভিডেন্ড দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে মোদী সরকার। নিট মুনাফার ৩০-১০০% পর্যন্ত এই খাতে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্র। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, অত বেশি টাকা কেন্দ্রকে দিতে অনীহা দেখিয়েছে সব ক’টি সংস্থা। তাদের প্রশ্ন, নতুন লগ্নির খরচ মেটানোর পরে কোথা থেকে এত টাকা আসবে?
বাজেটে সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ২০১৭-’১৮ সালের ডিভিডেন্ড চূড়ান্ত হতে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর গড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত। তার আগেই ওই ১২টি সংস্থার উপর চাপ বাড়াচ্ছে কেন্দ্র। তবে অর্থ মন্ত্রক এবং ওই সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তরফে বিষয়টি নিয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ইতিমধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেন্দ্রকে দেওয়া ডিভিডেন্ড কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করায় রাজকোষ ভরানো নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে অর্থ মন্ত্রকের। অগস্টেই শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবর্ষে তারা ডিভিডেন্ড দেবে ৩০,৬৫৯ কোটি টাকা। আগের বছরের অঙ্ক ৬৫,৮৭৬ কোটি।
ঝুলি ভরতে
• ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাছে তাদের নিট মুনাফার ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড দাবি কেন্দ্রের
• বাজার থেকে শেয়ার ফেরানো ও বোনাস শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব
• ১৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্বাস্থ্য খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে ১২টির কাছে বাড়তি দাবি-দাওয়া অর্থ মন্ত্রকের
• রেহাই চেয়েছে সব ক’টি সংস্থা
এ দিকে, রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াক, তা মোদী-জেটলি চান না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। ওই ঘাটতি যে-কোনও ভাবে জিডিপি-র ৩.২ শতাংশেই বেঁধে রাখতে চায় কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরজিৎ ভল্লা ইতিমধ্যেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
চলতি অর্থবর্ষে কর আদায়ে ঘাটতি হবে বলেই আশঙ্কা কেন্দ্রের। প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) জিডিপি বৃদ্ধির হার নেমেছে ৫.৭ শতাংশে, যা নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন বছরের জমানায় সবচেয়ে কম। গত বছরের নভেম্বরে নোট বাতিলের ধাক্কা তখনই অর্থনীতিতে লেগেছিল বলে মন্তব্য করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা।
সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, অর্থনীতির এই ডামাডোলে আয়ের পথ তৈরি করে রাজকোষ ভরতে তৎপর কেন্দ্র। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের হাতে থাকা সরকারি নথি সূত্রের খবর, গত ২৫ অক্টোবর ১৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়নের পরে সেগুলির মধ্যে থেকে ১২টিকে বেছে নিয়ে তাদের কাছে এই খাতে বাড়তি টাকা চাওয়া হয়েছে।
দাবি কেন
• চলতি অর্থবর্ষে কর আদায়ে ঘাটতির আশঙ্কা
• আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে সরকারি তহবিল জোগাড়ের পথ তৈরি
• অর্থবর্ষের মাঝামাঝিই রাজকোষ ঘাটতি ছুঁয়েছে ৪.৯৯ লক্ষ কোটি টাকা, যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৯১%
• ঘাটতি জাতীয় আয়ের ৩.২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রাতেই বেঁধে রাখতে চায় কেন্দ্র
তালিকায় রয়েছে এনএমডিসি-র মতো খনন সংস্থা, এমএমটিসি-র মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদি। তাদের বলা হয়েছে ২০১৬-’১৭ বা ২০১৭-’১৮ সালের নিট মুনাফার ৩০-১০০% ডিভিডেন্ড খাতে দিতে হবে কেন্দ্রকে। আয়ের পথ করতে কেন্দ্রের আরও দু’টি বিকল্প প্রস্তাব হল: শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে ইকুইটি ফিরিয়ে নিক ওই সব সংস্থা। বোনাস শেয়ারও ছাড়তে পারে তারা, যাতে শেয়ারের সংখ্যা বাড়ে।
এনএমডিসি সূত্রে খবর, তাদের কাছে চলতি অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রের দাবি ২,৫০০ কোটির ডিভিডেন্ড। ২০১৮-র ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোনাস শেয়ার দিতেও বলা হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রককে তারা জানিয়েছে, এর অর্ধেকেরও কম দিতে পারে তারা। কারণ, সরকারকে এই টাকা দেওয়া মানে বাদবাকি শেয়ারহোল্ডারদের আরও ৩,৫০০ কোটি দেওয়া। সরকারি অফিসাররা জানিয়েছেন, অবৈধ খননের অভিযোগ ওঠায় এনএমডিসি ইতিমধ্যেই জরিমানা বাবদ ওডিশাকে ৩ হাজার কোটি দিয়েছে। ফলে লগ্নির জন্য নগদের সংস্থান রাখতে কেন্দ্রকে বিপুল অর্থ দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এমএমটিসি-র কাছে কেন্দ্রের দাবি ৩০ কোটি টাকার ডিভিডেন্ড ও বোনাস ইস্যু। দু’টি ব্যাপারেই আপত্তি জানিয়েছে সংস্থা। সরকারি নথি সূত্রে খবর, প্রতিরক্ষা ও রেল দফতরের তিনটি সংস্থাকে তাদের নিট মুনাফার ১০০% ডিভিডেন্ড দিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি সংস্থাই কেন্দ্রকে এত টাকা দেওয়ার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বলা হচ্ছে লগ্নি বাড়াতে। একই সঙ্গে নিজেদের ঝুলি ভরতে তাদের কাছে বাড়তি ডিভিডেন্ড চাইছে কেন্দ্র। এই সাঁড়াশি চাপে তাদের উৎপাদনই মার খাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।