ফাইল চিত্র
করোনার মধ্যেই পাকা সোনার দাম (২৪ ক্যারাট ১০ গ্রাম, জিএসটি ছাড়া) নজিরবিহীন ভাবে ৫৭ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল গত বছর। ফলে রকেট গতিতে চড়তে থাকে গয়নার সোনাও। বিয়ের গয়না কিনতে গিয়ে কার্যত মাথায় হাত পড়ে বহু বাবা-মায়ের। ক্রেতার অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়ে সোনার দোকানগুলিও, বিশেষত ছোট ব্যবসায়ীরা। উৎসব এবং বিয়ের মরসুমের মুখে দাঁড়িয়ে এ বার কিছুটা আশার আলো দেখছেন ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই। কারণ, দ্রুত কমছে সোনার দাম। এক বছরেই কমেছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। গত দু’দিনে হাজার টাকার বেশি।
পাকা সোনার দাম ৪৭ হাজার টাকার নীচে নেমেছে। ফলে গয়নার সোনাও (২২ ক্যারাট) এখন ৪৪ হাজারের ঘরে। ১০ গ্রামের দাম কলকাতায় ৪৪,৫৫০ টাকা। সোনার বাজার সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। শুধু বিয়ের কেনাকাটা নয়, খুচরো গয়না কিনে ভবিষ্যতের সঞ্চয় গড়তে অভ্যস্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতারাও ফিরছেন। স্বর্ণ শিল্পমহলের আশা, উৎসবের মরসুমে পুরোপুরি ঢুকে পড়ার পরে বিক্রি আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কোভিড হানার পরে বিশ্ব জুড়ে আর্থিক ডামাডোলের মধ্যে লগ্নির প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল সোনা। শেয়ার, বিদেশি মুদ্রার বাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সেনসেক্স গত বছর মার্চে নেমেছিল ২৫ হাজারে। তার পরেই সুরক্ষিত লগ্নি হিসেবে পরিচিত সোনার রেকর্ড দৌড় শুরু হয়। কিন্তু ভারতে শেয়ার সূচক সেনসেক্স পরে বিপুল লগ্নির হাত ধরে ইতিমধ্যেই ৫৯ হাজার পেরিয়েছে। আমেরিকায় বন্ডের বাজার চাঙ্গা। সে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ভারতও দ্রুত ছন্দে ফিরবে বলে আশা। ফলে সোনায় লগ্নি দ্রুত কমছে। ফলে কমছে দাম।
পণ্যের বাজার নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ভিস্তা ইনট্যালিজেন্সের এমডি অরিন্দম সাহা বলছেন, ‘‘এখন ভারতে চাঙ্গা শেয়ার বাজার টানছে দেশি এবং বিদেশি লগ্নিকারীদের। বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে ডলারের দাম। আমেরিকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পেয়েছেন লগ্নিকারীরা। এ সবের ফলে লগ্নির ক্ষেত্র হিসেবে কমছে সোনার জৌলুস। তাই বিশ্ব বাজারে দ্রুত কমছে তার দর। তাল মিলিয়ে ভারতেও।’’
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আশিস পেথে-র দবি, ‘‘চড়া দামের ছেঁকায় যাঁরা গয়না কিনতে পারছিলেন না, তাঁরা এ বার বাজারমুখো হবেন বলে আশা। সামনেই দূর্গা পুজো, ধনতেরস, দিওয়ালি। তার পরে বড়দিন ও নতুন বছর। সামনের মরসুম ব্যবসায়ীদের ভালই কাটবে মনে হচ্ছে।’’ আশায় স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে-ও। তিনি বলছেন, ‘‘আগামী মাস থেকে বিয়ের মরসুম শুরু। সোনার দাম কমার সুযোগ নিতে শুরু করেছেন ক্রেতারা। অতিমারির আবহে কারিগরেরাও স্বস্তি পাচ্ছেন। গত বছর তাঁদের অনেকেই রোজগারহীন হয়ে পড়েছিলেন।’’