পড়ছে সেনসেক্স, বাড়ছে চিন্তা।
গয়না ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করে মঙ্গলবার ফের পড়ল সোনার দাম। পাশাপাশি আরও কিছুটা পড়েছে শেয়ার বাজারও। তবে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম বেড়েছে এ দিন।
সোমবার সোনার দাম কিছুটা বেড়েছিল। তাতে বৌবাজারের গয়না ব্যবসায়ীরা মনে করছিলেন উল্টো পথে হেঁটে এ বার সোনার দাম বাড়বে। কিন্তু মঙ্গলবারই ফের পড়ল সোনা। এ দিন কলকাতার বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম পড়ে গিয়েছে ২০০ টাকা। পাশাপাশি গয়নার সোনা অর্থাৎ ২২ ক্যারাট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে কমেছে ১৯০ টাকা। ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া দামের তালিকা অনুযায়ী, প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাটের মূল দাম দাঁড়িয়েছে ২৫,২৭৫ টাকায়। আর গয়নার সোনা ২৩,৯৮০ টাকায়।
টানা চার দিন পরে ডলারের সাপেক্ষে এ দিনই টাকার দাম বেড়েছে এক লাফে ২৫ পয়সা। যার ফলে বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৩.৯১ টাকা।
অন্য দিকে, সেনসেক্স এ দিন পড়ে গিয়েছে আরও ১০২.১৫ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হয়েছে ২৭,৪৫৯.২৩ অঙ্কে। এই নিয়ে গত গত চার দিনের লেনদেনে সেনসেক্স পড়ল মোট ১,০৪৫.৭০ পয়েন্ট।
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ অনুসন্ধানকারী কমিটি (সিট) পার্টিসিপেটরি নোটের (পি নোট) মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে লগ্নিকারী সম্পর্কে তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে সেবির কাছে। এতে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করায় সোমবার হু হু করে পড়েছিল শেয়ারের দাম। এক ধাক্কায় সেনসেক্স নেমে গিয়েছিল প্রায় ৫৫১ পয়েন্ট। এ দিনও তার জের বজায় ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। উল্লেখ্য, পি নোটের মাধ্যমে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ভারতের শেয়ার বাজারে খাটায়। কিন্তু সেখানে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর পরিচিতি জানানো বাধ্যতামূলক নয়।
অবশ্য বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ পি নোট সংক্রান্ত এই সমস্যাকেই শেয়ার বাজারের পতনের একমাত্র কারণ বলে মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, সিট-এর ওই সুপারিশ প্রকাশের আগে থেকেই বাজার পড়ছিল। কারণ, বিশেষত চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফলে শেয়ার বাজার বেজায় অখুশি। তা ছাড়া, আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাবে বলে খবর ছড়িয়েছে। লগ্নিকারীরা দেখে নিতে চান, শেষ পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হারের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী সপ্তাহে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কও ঋণনীতির পর্যালোচনায় বসছে। সুদের হারের ব্যাপারে এ দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেই দিকেও নজর রয়েছে লগ্নিকারীদের।
তার উপর সংসদে বাদল অধিবেশন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিরোধের জেরে প্রায় অচল হয়ে রয়েছে। অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকে পাঁচ দিন কেটে গিয়েছে। এক দিনও কোনও কাজ হয়নি। সাংসদদের হৈ হট্টোগোলের জেরে প্রতি দিনই লোকসভা মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন স্পিকার। অথচ আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে জরুরি জমি এবং পণ্য-পরিষেবা বিল দু’টি এই অধিবেশনেই পাশ হওয়ার কথা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলি কবে পাশ হবে, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেরই আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সংস্কার নিয়ে যে-সমস্ত পরিকল্পনার কথা বলেছে, সংসদের এই হাল দেখে সেগুলির বাস্তবায়ন নিয়ে লগ্নিকারীদের মনে সংশয় জাগতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি লগ্নিকারীদের। এর বিরূপ প্রভাবও শেয়ার বাজারের উপর পড়ার সম্ভাবনা।
আগামী কাল, বৃহস্পতিবার আগাম লেনদেনের সেটেলমেন্টের দিন। এর ফলে আজ বুধবার এবং আগামী কাল বাজার অনেকটাই অনিশ্চিত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।