প্রতীকী ছবি
আমজনতা, শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে গোটা অর্থনীতি এখন একটি জিনিসের অপেক্ষাতেই হা-পিত্যেশ করে বসে। সেটি হল, করোনার টিকা। কালো অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে একমাত্র আলোর রেখা। আর সেটাই ভরসা এ বার গয়না বিক্রেতাদেরও। সোমবার ১০ গ্রাম পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট) যখন ফের জিএসটি সমেত নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে ৫৪,৬৬২ টাকা, তখন স্বর্ণশিল্প মহলের একটাই কথা, ‘‘আর কয়েক মাসের মধ্যে যদি টিকা বাজারে আসে আমরা অনেকেই বেঁচে যাবো। না-হলে....।’’ না-হলে কী হতে পারে, সেটা অবশ্য মুখে আনতে চান না কেউ। শুধু বলছেন, সোনা প্রায় প্রতি দিনই হাজার টাকার বেশি বাড়ছে। ফলে চড়ছে গয়নার সোনাও। যা এ দিন জিএসটি ধরে ৫১,৮৬০ টাকা। গয়নার বাজারের ধারে-কাছে আসতে পারছেন না ক্রেতা।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, করোনার আবহে শেয়ার, ফান্ড বা মুদ্রা বাজার চূড়ান্ত অনিশ্চিত বলেই লগ্নিকারীরা আঁকড়ে ধরছেন সুরক্ষিত লগ্নির বর্ম সোনাকে। একই কারণে অনেকের পছন্দ রুপোও। ফলে সাধারণ রোজগেরেদের নাগালের বাইরে তারা। প্রতি কেজি রুপোর বাট এ দিন ৩৮১১ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৬,০২৩। রুপোর রেকর্ড দাম অবশ্য ৭৪,০০০ টাকা। ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল ছুঁয়েছিল।
তবে রুপোর ব্যবসায়ীদের দাবি, লকডাউনের জেরে সারা বিশ্বে খনন প্রায় বন্ধ। ভারতেও আমদানি দ্রুত কমেছে। ফলে জোগান তলানিতে। অথচ বেড়েছে চাহিদা। ফলে দাম বাড়ছে। রানাঘাটের রুপোর গয়না ব্যবসায়ী শ্যামল মন্ডল জানান, “আদিবাসীদের মধ্যে রুপোর গয়নার চল বেশি। তাঁদের মহিলারা পায়ের মল, হাতের বালা পছন্দ করেন। কিন্তু দাম এত যে, কেউ কিনছেন না। বিক্রি প্রায় ৮০ শতাংশই উধাও।’’
কাজ না-থাকায় চরম দুর্দশায় সোনার গয়নার কারিগরেরাও। অনেকেই আনাজ, ডিম ইত্যাদি বেচে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। বেলঘরিয়ার সোনার কারিগর অনুকূল চন্দ্র দাস বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে সোনার গয়না তৈরি করছি। কেন্দ্রের কৌশল যোজনায় প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কারিগরের সার্টিফিকেটও পেয়েছি। কিন্তু গত ৪ মাসে ২০০ টাকাও আয় হয়নি। এখন চাউমিনের প্যাকেট নিয়ে রাস্তায় ঘুরছি। কেউ যদি কেনে। কিন্তু তাতে কি আর সংসার চলে?’’
কারিগরদের সমস্যার প্রতি উদাসীনতার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার। তাঁর তোপ, “প্রধানমন্ত্রীর ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে হকাররাও আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু গয়নার কারিগরেরা ব্রাত্য।’’