বরাত কমায় মাথায় হাত কারিগরদের

সর্বকালীন রেকর্ড, সোনার দর ছাড়াল ৪০ হাজার টাকা

সোনার দাম এতটা বাড়ায় মাথায় হাত গয়নার কারিগরদের। ডোমজুড়ের কারিগরেরা বলছেন, গয়নার চাহিদা কমেছে। এতটাই যে, তাঁদের বরাত প্রায় তলানিতে।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০২
Share:

এমনিতে সারা বিশ্বে সোনায় লগ্নি সাম্প্রতিক কালে কিছুটা বেড়েছে।

সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল সোনার দাম। জিএসটি যোগ করে রাজ্যে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট পাকা সোনা ছাড়াল ৪০ হাজার টাকা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর কারণ এক দিকে, বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বাড়ায় আমদানির খরচ বৃদ্ধি। অন্য দিকে, দেশে আমদানি শুল্ক ও জিএসটির চড়া হার। তাঁদের আশঙ্কা, আগামী দিনে আমদানি আরও কমলে হলুদ ধাতু আরও দামি হতে পারে।

Advertisement

সোনার দাম এতটা বাড়ায় মাথায় হাত গয়নার কারিগরদের। ডোমজুড়ের কারিগরেরা বলছেন, গয়নার চাহিদা কমেছে। এতটাই যে, তাঁদের বরাত প্রায় তলানিতে। কারিগরদের বাঁধা মাইনে নেই। প্রতিটি গয়না তৈরির জন্য মজুরি পান তাঁরা। অনেকেই বলছেন, গয়না বিক্রি কমায় শোরুমগুলি থেকে বরাত কম দেওয়া হচ্ছে। প্রতাপ দাসের কারখানায় কাজ করেন ১০০ জন কারিগর। তাঁর দাবি, সবাইকে নিয়মিত কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কোপ পড়ছে অনেকের রুটি-রুজিতে।

এমনিতে সারা বিশ্বে সোনায় লগ্নি সাম্প্রতিক কালে কিছুটা বেড়েছে। তবে তা মূলত হয়েছে কয়েন ও বারে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের এমডি সোমসুন্দরম পি আরের দাবি, বিশ্ব জুড়ে সুদ কমছে। ফলে জৌলুস হারাচ্ছে ঋণপত্র বা ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত। শেয়ার বাজারও টালমাটাল। সমস্যা আরও জটিল করেছে মার্কিন-চিন শুল্ক-যুদ্ধের জেরে শ্লথ হওয়া বিশ্ব অর্থনীতি। তাই লগ্নিকারীরা ঝুঁকেছেন সোনার দিকে। যে কারণে স্বাভাবিক নিয়মে বিশ্ব বাজারে তার দাম বেড়েছে। মাস দুয়েক আগে যা ছিল আউন্সে ১,২৮৫ ডলার, তা প্রায় ২০% বেড়ে হয়েছে ১,৫৪০ ডলার। ফলে বেড়েছে বিদেশ থেকে সোনা কেনার খরচ।

Advertisement

এক ঝলকে

• কলকাতায় ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম জিএসটি বাদে ৩৯,৮১০ টাকা।
• জিএসটি যোগ করে দাম ছাড়িয়ে গিয়েছে ৪০,০০০।

অভিযোগ

• একেই চাহিদার অভাবে খদ্দের কমেছে সোনার গয়নার দোকানে।
• তার উপরে ধাক্কা দিচ্ছে দাম এতখানি বেড়ে যাওয়া।
• সব মিলিয়ে গয়না তৈরির বরাতে কোপ পড়েছে কারিগরদের।
• ডোমজুড়ের কারিগররা বলছেন, হার, বালা, ব্রেসলেটের মতো গয়নার বরাত প্রায় বন্ধ।
• ফলে সঙ্কটে পড়েছেন সকলে। অনেকেই নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না।
• একাংশের দাবি, এই অবস্থা মনে করাচ্ছে ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময়কার স্মৃতি।

জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখের মতে, তার উপরে দেশে সোনায় আমদানি শুল্ক বেড়ে হয়েছে ১২.৫০%। ডলারের সাপেক্ষে বেড়েছে টাকার দামও। আর বিশ্ব বাজার থেকে সোনা ডলারে কিনতে হয় বলে সব মিলিয়ে তার আমদানির খরচ টাকার অঙ্কে অনেকটা চড়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে কর। পারেখ বলেন, ‘‘সোনায় ভ্যাট ছিল ১%। জিএসটি চালুর পরে এখন কর ৩%। তখন থেকেই সোনার দাম বাড়তে বাড়তে এ বার রেকর্ড ছুঁয়েছে।’’

িহসেব বলছে, এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের অগস্টে ভারতে সোনা আমদানি হয়েছিল ১১১ টন। অথচ এ বছর ওই মাসে তা নেমেছে ৭৩ টনে। পারেখের আশঙ্কা, ‘‘আগামী দিনে আমদানি আরও কমতে পারে। তখন আরও দামি হতে পারে সোনা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement