—প্রতীকী ছবি।
সোনা বিক্রির নিয়মে এ বার বড় বদল আনতে চলেছে কেন্দ্র। গোল্ড বুলিয়ানে হলমার্কিং বাধ্যতামূলক করবে সরকার। এই মর্মে আসা প্রস্তাব বর্তমানে চিন্তাভাবনার স্তরে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি গবেষণাগারে তৈরি হিরের ক্ষেত্রেও আসতে পারে নতুন আইন। ক্রেতাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের তরফে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর বণিক সভা ‘সিআইআই’ আয়োজিত ‘রত্ন ও অলঙ্কার’ শীর্ষক একটি আলোচনাচক্রে যোগ দেন উপভোক্তা বিষয়ক সচিব নিধি খারে। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘গুণগত মান ঠিক রেখে সঠিক রত্ন বা অলঙ্কার যাতে ক্রেতারা হাতে পান, তার উপর জোর দিচ্ছে সরকার।’’ সেই জায়গা থেকেই গোল্ড বুলিয়ানে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।
অনুষ্ঠানে রত্ন ও গয়না শিল্পকে ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বলে উল্লেখ করেন নিধি। তাঁর কথায়, ‘‘রফতানি এবং কর্মসংস্থান -- দু’টি ক্ষেত্রেই এর ভূমিকা অপরিসীম। রত্ন ও অলঙ্কার শিল্পের প্রসারের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গুণগত মান নিয়ে কোনও রকমের আপস করা উচিত নয়।’’
২০২১ সালের ২৩ জুন স্বর্ণালঙ্কার ও সোনার তৈরি সামগ্রীর ক্ষেত্রে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করে সরকার। বর্তমানে ৪০ কোটির বেশি সোনার গয়না ও সামগ্রীতে হলমার্কের ছাপ দেওয়া হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন হলুদ ধাতুর অলঙ্কার শিল্পে স্বচ্ছতা এসেছে, অন্য দিকে তেমনি ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন উপভোক্তা বিষয়ক সচিব।
গোল্ড বুলিয়ানে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই কেন্দ্রীয় সরকারি আমলা। নিধির যুক্তি, ‘‘অলঙ্কার শিল্পের সঙ্গে জড়িতেরা হলুদ ধাতু আমদানির সময়ে এর গুণগত মান নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন না। হলমার্ক থাকলে নির্ভুল ভাবে সেটি বুঝতে পারবেন তাঁরা। অন্য দিকে গোল্ড বুলিয়ানে আরও স্বচ্ছতা আসবে।’’
গত বছর (পড়ুন ২০২৩) ভারতের অলঙ্কার শিল্পের বাজার ৪,৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছয়। ২০২৩ সালের মধ্যে এটি বেড়ে ১৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার হবে বলে দাবি করেছে কেন্দ্র। উপভোক্তা সচিব জানিয়েছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বর্ণ রফতানিকারী দেশ হল ভারত। দেশের মোট রফতানির সাড়ে তিন শতাংশ দখল করে রেখেছে হলুদ ধাতু।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নিবন্ধিত জুয়েলার্সের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৯৫ লক্ষ। হলমার্ক সেন্টারের সংখ্যা ১,৬০০-তে গিয়ে পৌঁছেছে। সোনার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে ল্যাবে তৈরি হিরের চাহিদাও অনেকটাই বেড়েছে। বিপুল টাকা খরচ করে প্রাকৃতিক হিরে কেনার বদলে গ্রাহকদের একটা বড় অংশ এ দিকে ঝুঁকছেন। ফলে সেখানেও তাঁদের স্বার্থরক্ষার জন্য নতুন নিয়ম চালু করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেছেন নিধি।
কেন্দ্রীয় উপভোক্তা সচিবের বক্তব্যকে পূর্ণ সমর্থন করেছেন জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সব্যসাচী রায়। কাঁচামালের গুণমান নিশ্চিত করতে সোনার বুলিয়নের বাধ্যতামূলক হলমার্কিং প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।