সৌজন্য: অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে নিজের বাড়িতে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র
দিল্লির মসনদে নরেন্দ্র মোদীর ফেরার ছবি স্পষ্ট হতেই টুইট করেছিলেন শিল্পপতি হর্ষ গোয়েন্কা। মোদ্দা বক্তব্য, আগামী পাঁচ বছরে কাজের সুযোগ তৈরি, কৃষিতে সংস্কার, কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো বিষয়ে জোর দিতে হবে কেন্দ্রকে। বাড়াতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, এনএসএসও-র মতো প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা। নাক গলানো চলবে না তাদের কাজে। মোটের উপর, শুরু থেকেই পাখির চোখ করতে হবে অর্থনীতিকে। ফল ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে তাঁর সঙ্গে একমত অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতেও, ভোট ময়দানে কার্যত অপ্রতিদ্বন্দ্বী মোদীকে অর্থনীতির ছবি ঝাঁ-চকচকে করতে হাঁটতে হবে ভারসাম্যের সরু সুতোয়। কাজের সুযোগ তৈরির জন্য বৃদ্ধির গতি বাড়াতে হবে ঘাটতিকে আগাগোড়া লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রেখে। সঙ্গে থাকছে সংস্কারে গতি বৃদ্ধির আশা।
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, দেশে এখন চাহিদায় ভাটা। স্কুটার, ট্রাক্টর, গাড়ি সমেত বিভিন্ন জিনিসের কেনাবেচা কমা মাথাব্যথার কারণ। অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি ৬.৬ শতাংশে নেমেছে। তার উপরে লোকসভা ভোটের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য রথীন রায় সতর্ক করেছেন যে, ‘মাঝারি আয়ের ফাঁদ’-এ পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতি। তাঁর যুক্তি, অর্থনীতির গতিতে একমাত্র ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছিল আয়ের নিরিখে উপরের সারিতে থাকা ১০ কোটি মানুষের কেনাকাটা। কিন্তু তা বাড়ার গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে তা আর তেমন বাড়বেও না। ফলে ধাক্কা লাগবে বৃদ্ধির হারে। সবার আগে বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে সেই সমস্যা আটকাতে হবে কেন্দ্রকে।
তার জন্য অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়া জরুরি। প্রয়োজন সরকারি বিনিয়োগ। বিশেষত পরিকাঠামোয়। কিন্তু তা করতে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি মাত্রা ছাড়ালে চলবে না। চাহিদা চাঙ্গা হতে পারে মানুষের হাতে কাজ থাকলে। কিন্তু বেকারত্ব এখন দেশের জ্বলন্ত সমস্যা। এনএসএসও-র ফাঁস হওয়া সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ সালে দেশে তার হার সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ। তাই চাহিদা তৈরির জন্য কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কৃষি সংস্কারে মন দিতে হবে কেন্দ্রকে। যাতে গ্রামেও মানুষের হাতে টাকা আসে।
অর্থনীতি চাঙ্গা করা এবং বাজারে কেনাবেচা বাড়ানোর লক্ষ্যে নগদের জোগান বাড়াতে কেন্দ্রকে বেশি অর্থ ঢালতে হবে। মোদী ভোটের আগেই সমস্ত মন্ত্রককে ১০০ দিনের রোডম্যাপ তৈরি করে রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু বেশি খরচ করতে গিয়ে ঘাটতি লাগামছাড়া হওয়ার আশঙ্কা প্রবল বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। আজ রথীন রায়ও এক নিবন্ধে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই ভারসাম্য কেন্দ্রের সামনে চ্যালেঞ্জ। আমেরিকা-চিনের শুল্ক যুদ্ধ, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির মতো সমস্যার মোকাবিলা কেন্দ্র কী ভাবে করে, নজর থাকবে সে দিকেও।
শোনা যাচ্ছে, অসুস্থতার জন্য অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব আর নিতে চাইছেন না অরুণ জেটলি। কিন্তু আগামী দিনে অর্থমন্ত্রীর পদে যিনিই আসুন, এই সব চ্যালেঞ্জ তাঁর সামনে ভিড় করবে জুলাইয়ের বাজেটেই।