আবাসন শিল্পের প্রত্যাশার ঝুলি পূর্ণ।
মন্দার জুজু। নিম্নমুখী জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার। পর পর ধাক্কায় গত কয়েক বছরে এই শিল্পের গড় বৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছে। মোদি সরকারের প্রথম বাজেটের পরে ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধির আশা করছে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল। কারণ নগরায়নের ফলে প্রকল্প তৈরির সুযোগ এবং সেই প্রকল্পে লগ্নি টানার সুযোগ দু’টি শর্তই পূরণ করেছে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বাজেট। সঙ্গে রয়েছে গৃহঋণে করছাড়ের বধির্র্ত সুযোগ।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবের অনেকটাই জুড়ে ছিল আবাসন শিল্প। প্রথম পাওনা হিসেবে শিল্পমহলের মুখে উঠে এসেছে প্রত্যক্ষ লগ্নির বিপুল সম্ভাবনা ও গৃহঋণে বাড়তি ছাড়ের সুযোগ। এতদিন গৃহঋণের সুদে বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় ছিল। এখন সেই সীমা বেড়ে দাঁড়াল ২ লক্ষ টাকা।
এ দিন জেটলি জানান, উন্নয়নের ফলে গ্রাম ছেড়ে শহরে বাস করার প্রবণতা বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যাদের লক্ষ্য উন্নতমানের জীবনযাত্রা। আর এই নতুন মধ্যবিত্তদের জন্য চাই নতুন শহর। এখনকার বড় শহরগুলির পাশে ছোট ছোট এসব শহরে গড়ে উঠবে আবাসন-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো। এ ধরনের শহরকে ‘স্মার্ট সিটি’ বলছেন মন্ত্রী। দেশ জুড়ে ১০০টি স্মার্ট সিটি তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার। বরাদ্দ ৭০৬০ কোটি টাকা।
ওই সব শহরে আবাসন তৈরির জন্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ টানতে চায় কেন্দ্র। তাই প্রকল্পের মাপ ২০ হাজার বর্গ মিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগে ৫০ হাজার বর্গ মিটারের নীচে কোনও প্রকল্প প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নেওয়ার ছাড়পত্র পেত না। একই সঙ্গে নামিয়ে আনা হয়েছে বিনিয়োগের পরিমাণ। নতুন নিয়মে ন্যূনতম লগ্নির পরিমাণ ৫০ লক্ষ ডলার। আগে তা ছিল ১ কোটি মার্কিন ডলার। প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়সীমা অবশ্য তিন বছরই রয়েছে। পরামর্শদাতা সংস্থা কুশম্যান ওয়েকফিল্ডস-এর অন্যতম কর্তা অভিজিৎ দাসের দাবি, পুঁজির সমস্যা দূর করার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আসার ফলে গোটা ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা আসবে।
বিদেশি লগ্নি টানার এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছে নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকল্প ও লগ্নির মাপ কমিয়ে আনা হয়েছে। এবং এ ধরনের প্রকল্পে কম দামি বাড়ি তৈরির জন্য ৩০ শতাংশ খরচ করলে এই নূন্যতম বিধিনিষেধও রাখা হবে না। ক্রেডাই বেঙ্গলের দুই কর্তা হর্ষ পাটোডিয়া ও সুশীল মোহতার দাবি, নতুন নিয়মে লাভবান হবে ছোট ও মাঝারি প্রকল্প। সহজেই বিদেশি লগ্নি নেওয়া যাবে। পুঁজির সমস্যা মিটবে। প্রকল্পে গতি আসবে।
আবাসন প্রকল্পে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি ঢালার নয়া নিয়মে লাভবান হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও। ভারতে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে এই নিয়ম নতুন সুযোগ তৈরি করবে বলে দাবি ক্রেডাই-এর প্রাক্তন কর্তা প্রদীপ সুরেকার। তাঁর দাবি, ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণও কমেছে। ফলে এখানে লগ্নি করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়বে।
তবে শুধুই বিদেশি লগ্নিতে আটকে থাকেনি বিজেপি সরকারের প্রথম বাজেট। রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের মাধ্যমে আবাসন ও পরিকাঠামো প্রকল্পের পুঁজির সংস্থান করতে উৎসাহ দেবে সরকার। এ ধরনের ট্রাস্টে লগ্নি করার জন্য দেওয়া হবে আর্থিক সুবিধা। জৈন গোষ্ঠীর শ্রায়াংশ জৈনের মতে, এ ধরনের ট্রাস্ট বিনিয়োগের বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠতে পারবে।
নগরায়ন ও বিদেশি লগ্নি টানতে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে আবাসন তৈরির উপর জোর দিয়েছে এ বারের বাজেট। গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে যা পৌঁছে দিতে ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্ক-এর বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮০০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে শহরাঞ্চলে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি করতে এনএইচবি-কে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি ৪০০০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও বস্তি উন্নয়নকে সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে পরোক্ষ ভাবে লাভবান হবে নির্মাণ শিল্পও।
শুধুই মাথার উপরে ছাদ তৈরি নয়। শিল্পমহলের দাবি, আবাসন শিল্প ফের চাঙ্গা হবে। বেঙ্গল চেম্বার অব কমাসের্র সুনীল মিত্র ও ভারত চেম্বার অব কমাের্সর সজ্জন ভজনকার মতে, তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। নির্মাণ সংস্থা অম্বুজা গোষ্ঠীর হর্ষ নেওটিয়া ও সালারপুরিয়ার প্রধান বিজয় অগ্রবালের দাবি, এই বাজেটের দীর্ঘমেয়াদি ফল পাবে আবাসন শিল্প।