গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতেও অর্থনৈতিক সঙ্কট ঠেকানো গেল না। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার (জিডিপি) এসে ঠেকল ৫ শতাংশে, গত ছ’বছরে যা সর্বনিম্ন। শুক্রবার সরকারি নথি থেকে এমনই তথ্য উঠে এল।
কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ, শেষ ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছিল। এ বার তার চেয়েও কমল আর্থিক বৃদ্ধির হার। এর আগে, ২০১৩ সালে শেষ ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার গিয়ে ঠেকেছিল ৪.৩ শতাংশে। তার পর এই প্রথম আর্থিক বৃদ্ধির হার এত নামল।
শিল্প ক্ষেত্র এবং বিশেষ করে আর্থিক ক্ষেত্র নিয়ে সম্প্রতি তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। শিল্প ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে গাড়ি শিল্পে সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। গত ৭০ বছরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি রয়টার্সের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, এ বছর প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৫.৭ শতাংশে এসে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বৃদ্ধির হারে এতটা পতন আশা করেননি কেউই।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: মিশে যাচ্ছে অনেক ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ২৭ থেকে কমে হচ্ছে ১২, ঘোষণা সীতারামনের
অন্য দিকে, চলতি মাসের শুরুতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৩৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোয় রেপো রেট ৫.৪০ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। তার ফলে রেপোরেট ৫.৪০ শতাংশে এসে দাঁড়ায়, যার পর চলতি আর্থিক বছরের জিডিপি বৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রাও ৭ থেকে কমিয়ে ৬.৯ শতাংশে আনা হয়। ৮ অগস্ট রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে আর্থিক বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৫.৮-৬.৬ শতাংশের মধ্যে। দ্বিতীয়ার্ধে ৭.৩-৭.৫ শতাংশের মধ্যে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রায় ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপি বৃদ্ধির হার।
আরও পড়ুন: খাগড়াগড় কাণ্ডে ৬ জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড, বাকিদের ৬-৮ বছরের জেল
জিডিপির বৃদ্ধির শ্লথ গতির জন্য মূলত ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা কম, দুর্বল বিনিয়োগ, সার্ভিস সেক্টরের খারাপ পারফরম্যান্সকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাড়ি শিল্প। চাহিদা কম থাকায় শুধু গাড়ি উৎপাদনেই ব্যাপক কাটছাঁট হয়নি, কর্মী সঙ্কোচনের পথেও যেতে হচ্ছে গাড়িনির্মাতা সংস্থাগুলিকে। দু’লক্ষের বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আর্থিক মন্দা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গোটা বিশ্বেই আর্থিক গতি ধীর। ভারতের অর্থনীতিতে তারই প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে দাবি করেন, আমেরিকা-চিনের চেয়ে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ভালই। কিন্তু রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার যেখানে ৫ শতাংশ, ওই একই সময়ে চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ।