—ফাইল চিত্র।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে উত্তর ২৪ পরগনায় অশোকনগর-এর তেল-গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আগামী মার্চে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ শুরু করতে পারে ওএনজিসি। সংস্থা সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে এমন লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেই এগোচ্ছে সংস্থা। যে লক্ষ্য পূরণ হলে রাজ্যে এই প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দরজা খুলবে। যাকে কেন্দ্র করে গ্যাস ভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। আশা, এর হাত ধরে তৈরি হবে বিপুল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজের সুযোগও।
দীর্ঘ এক দশকের চেষ্টা ফলপ্রসু হওয়ার সম্ভাবনায় এখন দিন গুনছে ওএনজিসি-র প্রকল্প। গ্যাস তোলার পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে অশোকনগরের ক্ষেত্র থেকে তেল তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন সংস্থাটির। গোটা প্রকল্পে লগ্নি হাজার কোটি টাকার বেশি, দাবি এক ওএনজিসি কর্তার।
সূত্র জানাচ্ছে, এই তেল-গ্যাস ক্ষেত্রটি বেঙ্গল বেসিনের অঙ্গ। এমন বেসিন বা অববাহিকায় হাইড্রোকার্বন জমা থাকার ফলে সৃষ্টি হয় গ্যাস ও তেল পাওয়ার সম্ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, সুন্দরবন-সহ কিছু এলাকা ছাড়াও বেঙ্গল বেসিনের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশের একাংশ। পড়শি দেশ ইতিমধ্যেই সেখান থেকে তেল, গ্যাস উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। ওএনজিসির সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সংস্থার কর্পোরেট কমিউনিকেশনের প্রাক্তন কর্তা পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অশোকনগরে প্রকল্পটি গড়ে ওঠার ফলে পশ্চিমবঙ্গ এই প্রথম দেশের হাইড্রোকার্বন এলাকার মানচিত্রে স্থান পেতে চলেছে, যেখানে তেল এবং গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’
ওএনজিসির ইঙ্গিত
• আগামী মার্চে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু করাই প্রধান লক্ষ্য।
• সম্ভাব্য লগ্নির অঙ্ক ১০০০ কোটি টাকারও বেশি।
• গ্যাস তোলার পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে অশোকনগরের ওই ক্ষেত্র থেকে তেল তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
রাজ্যের লাভ
• এ রাজ্যে এই প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দরজা খুলতে চলেছে।
• গ্যাস ভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা।
• প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে বিপুল।
সরবরাহ কী ভাবে
• প্রথমে প্রাকৃতিক গ্যাস তুলে ট্যাঙ্কারে করে।
• উৎপাদন আরও বাড়লে মজুত কেন্দ্র গড়ে সেখান থেকে।
• পরবর্তী পর্যায়ে সরবরাহ প্রক্রিয়ায় গেল-সহ আরও কিছু সংস্থা যোগ দিতে পারে।
আরও খবর: বলিউডের ছবিতে যে প্রাণ রয়েছে, হলিউডে সেটা আর নেই: ক্রিস্টোফার নোলান
সংস্থার এক সূত্র জানাচ্ছে, ওএনজিসি-র পরিকল্পনা প্রাথমিক ভাবে ট্যাঙ্কারে করে উত্তোলিত গ্যাস সরবরাহ করবে তারা। প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে গ্যাস মজুত কেন্দ্র গড়বে। পরবর্তী সময়ে সরবরাহ হবে সেখান থেকেই। সেই পর্যায়ে সরবরাহ ও বিপণনে গেল-সহ আরও কিছু সংস্থা যুক্ত হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও খবর: দ্বিতীয় শাহিনবাগ বানাতে চাইছেন কৃষকরা, আক্রমণ মনোজ তিওয়ারির
অশোকনগরে প্রায় ১০ বছর আগে অনুসন্ধান শুরু করে ওএনজিসি। তিনটি অনুসন্ধান কুয়ো (এক্সপ্লোরেশন ওয়েল) খোঁড়ার পরে ২০১৬ সালে প্রথম পাওয়া যায় গ্যাসের সন্ধান। তেল পাওয়ারও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। এর জন্য আরও দু’টি অনুসন্ধান কুয়ো খোঁড়ার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার। এক সূত্রের খবর, গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পরে তার উত্তোলন শুরুর জন্যও কুয়ো (ডেভেলপমেন্ট ওয়েল) খোঁড়া শুরু হয়েছে। যেটি শেষ করার কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। যেখান থেকেই তোলা হবে গ্যাস। তার পরে শুরু হবে আরও একটি উৎপাদন কুয়ো খনন।
উল্লেখ্য, দেশে মোট ২৬টি হাইড্রোকার্বন বেসিন রয়েছে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৭টি থেকে গ্যাস এবং তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে। অশোকনগরেরটি অষ্টম। আটটি বেসিনের মধ্যে ৭টি ওএনজিসির এবং একটি অয়েল ইন্ডিয়ার।