ফাইল চিত্র।
দেশে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে বস্ত্র শিল্পেও ১০,৬৮৩ কোটি টাকার উৎসাহ প্রকল্প ঘোষণা করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। দাবি করল, পাঁচ বছর ধরে ওই উৎপাদন ভিত্তিক আর্থিক সুবিধায় (পিএলআই) ভর করে ফের বিশ্ব বাজারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে ভারতের পোশাক এবং কাপড়ের বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি।
সরকারের আশা, বস্ত্রে পিএলআইয়ের সুবিধা ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি নতুন লগ্নি টানবে। সব মিলিয়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হবে দেশে। আর তার হাত ধরে সরাসরি ৭.৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ কাজ পাবেন। পরোক্ষ ভাবে, অর্থাৎ বস্ত্র শিল্পের সংশ্লিষ্ট সহযোগী ক্ষেত্রে তৈরি হবে আরও কয়েক লক্ষ কাজ।
বুধবার দুই মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং পীযূষ গয়াল ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই উৎসাহ প্রকল্প চালুর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। যাতে দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে চাঙ্গা করা যায় রফতানিকেও। প্রস্তাব অনুযায়ী, বস্ত্র শিল্পের নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে মিলবে এই আর্থিক সুবিধা। যার মধ্যে আছে হাতে বোনা সুতো দিয়ে তৈরি কাপড় (এমএমএফ ফ্যাব্রিক), হাতে বোনা সুতোর কাপড়ে তৈরি জামা-কাপড় (এমএমএফ অ্যাপারেল) এবং বস্ত্র শিল্পের এমন ১০ টি পণ্য (টেকনিক্যাল টেক্সটাইলস), যা চিকিৎসা, গাড়ি, জল, দমকল, কৃষি, প্রতিরক্ষা, বিমান-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, টেকিনিক্যাল টেক্সটাইলসে উঁচু মানের সুতো ব্যবহার করা হয়। তার চাহিদাও বিপুল।
বস্ত্রমন্ত্রী গয়ালের দাবি, উৎসাহ প্রকল্পের কাঠামো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে অনেক সংস্থাই নতুন করে এই সমস্ত ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য লগ্নি করতে উৎসাহী হবে। তাঁর বার্তা, ‘‘আন্তর্জাতিক বস্ত্র বাজারের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ অংশীদারি হাতে বোনা সুতো, কাপড় এবং অন্যান্য শিল্পের প্রয়োজনে ব্যবহৃত বস্ত্র শিল্পের পণ্যের। যেগুলির দাম বেশি। উৎসাহ প্রকল্পে সায় দেওয়া হয়েছে সেখানে ভারতের দখলদারি বাড়াতেই। দেশে উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে এই আর্থিক সুবিধা।’’ বস্ত্র সচিব ইউপি সিংহের দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে হাতে বোনা সুতো এবং টেকিনিক্যাল টেক্সটাইলের জন্য আনা পিএলআই প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি বেরোবে। আর চলতি মাসের শেষে জারি হবে বিশদ নির্দেশিকা।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্প। রফতানিকারীদের সংগঠন ফিও-র প্রেসিডেন্ট এ শক্তিভেল বলেন, ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের নকশা বদলে দিতে পারে এই পদক্ষেপ। বর্তমানে দেশে তৈরি মোট পোশাকের মাত্র ২০% হাতে বোনা সুতোর হয়। এই ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়লে পরের তিন বছরে দ্বিগুণ রফতানির পথ খুলবে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রকল্পটিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সম্ভাবনাময় জেলা বা তৃতীয়, চতুর্থ স্তরের শহরে, গ্রামে-গঞ্জে।
দেশের মাটিতে উৎপাদনের আগ্রহ বাড়াতে একের পর এক শিল্পে আর্থিক উৎসাহ প্রকল্পের দরজা খুলছে কেন্দ্র। গাড়ি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, টেলিকম যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে এয়ার কন্ডিশনার বা এলইডি লাইটের মতো দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রের নানা রকম সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে সুবিধা ঘোষণা হয়েছে আগেই।