পরীক্ষা। দলের বৈঠকে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী। ছবি: এএফপি।
আর্থিক ত্রাণ পেতে একেবারে শেষ মুহূর্তে পেশ করা গ্রিসের প্রস্তাবে ক্ষীণ হলেও আশার আলো দেখছে ইউরোপ। তাকে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্যর তকমা দিচ্ছে ফ্রান্স এবং ইতালি। এমনকী এ বিষয়ে সবচেয়ে রুখো অবস্থান নিয়ে থাকা জার্মানিও মানছে, সঙ্কট কাটাতে গ্রিসের ঋণ কিছুটা ঢেলে সাজা জরুরি। তবে সংস্কারের সেই প্রস্তাব গ্রিক পার্লামেন্টে পাশ করানোই প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ।
কথা ছিল, দেউলিয়া ঘোষণার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা অর্থনীতিকে ত্রাণের অক্সিজেন জোগাতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত্রির মধ্যে ইউরোপের সামনে নতুন প্রস্তাব দেবে গ্রিস। দিনভর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে শলা-পরামর্শের পরে প্রায় শেষ মুহূর্তে তা করেন সিপ্রাস। জানানো হয়, আপাতত ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেনা মিটিয়ে ভেসে থাকতে ৫,৩৫০ কোটি ইউরো (৫,৯০০ কোটি ডলার) ত্রাণ চাইছে গ্রিস। সেই সঙ্গে ঋণের বিপুল বোঝার একটা বড় অংশকে ঢেলে সাজার আর্জি জানিয়েছে তারা। কিছুটা শিথিল করতে বলেছে আগামী দিনে উদ্বৃত্ত বাজেট (যেখানে সরকারের ব্যয়ের তুলনায় আয় বেশি) তৈরির জন্য গ্রিসের সামনে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যও।
কিন্তু তেমনই এ বার ত্রাণের টাকা পেতে আগের তুলনায় নমনীয় হয়েছে সিপ্রাস-সরকার। বদলে ফেলেছে অবস্থান। অনেক ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে সংস্কারের তেতো দাওয়াই প্রয়োগের জন্য ইউরোপের দাবি। যেমন, প্রস্তাবে প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের কথা বলা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সময় বেঁধে সরকারি জাহাজ বন্দর, বিমান বন্দর ইত্যাদি বেসরকারিকরণের। বলা হয়েছে পেনশনের সুযোগ-সুবিধা কমানো হবে। বাড়ানো হবে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় যুক্তমূল্য করের (ভ্যাট) হার।
নতুন করে আর্থিক ত্রাণ দেওয়ার জন্য এই সব শর্ত মানার কথা অনেক দিন থেকেই বলে আসছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। তাতে সমর্থন রয়েছে আইএমএফ-এরও। ফলে গ্রিসের এই নতুন প্রস্তাবে খুশি তাদের অনেকেই। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেন, ‘‘এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত এবং গ্রহণযোগ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখাচ্ছে গ্রিসকে।’’ ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজির কথায়, ‘‘রফার বিষয়ে আমি এখন অনেক বেশি আশাবাদী।’’ ঐকমত্যে পৌঁছনো নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন অর্থসচিব জ্যাকব লিউ-ও। তবে গ্রিসকে এখনই অতখানি দরাজ শংসাপত্র দিতে নারাজ জার্মানি। তাদের মতে, অবস্থা ঢলতে পারে যে কোনও দিকে। তবে গ্রিসের ঋণ ঢেলে সাজার বিষয়ে আগের তুলনায় কিছুটা নরম হয়েছে তারা।
আগামী দু’দিনে গ্রিসের নতুন প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপীয় কমিশন, আইএমএফ ও ইউরোপের অর্থমন্ত্রীরা বিস্তর কাটাছেঁড়া করবেন। প্রস্তাবে সায় পেতে হবে জার্মানির পার্লামেন্টে। এ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত হতে পারে শনিবার। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও অনেকে মনে করছেন, এ বার সিপ্রাসের প্রথম বড় পরীক্ষা ঘরের মাঠে। কারণ, সবার আগে গ্রিক পার্লামেন্টে এই নতুন প্রস্তাব পাশ করাতে হবে তাঁকে।
গত রবিবারেই শর্ত মেনে ত্রাণ না-নেওয়ার জন্য গ্রিক জনতার কাছে আর্জি জানিয়ে গণভোটে গিয়েছিলেন সিপ্রাস। কিন্তু শুক্রবার সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন তিনি। সংস্কারের তেতো দাওয়াই প্রয়োগের কথা মেনেছেন। বারবার বলছেন, প্রয়োজনে পুরনো একবগ্গা অবস্থান থেকে এক পা পিছিয়ে এসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার কথা। প্রস্তাবে সমর্থন চেয়ে দলের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পার্লামেন্টে তিনি প্রস্তাব পাশ করাতে পারবেন তো? বিশেষত যেখানে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে বেসুরো গাইছেন রাজনীতিকদের একাংশ। বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ব্যয় সঙ্কোচের শর্ত মেনে নেওয়ার বিরুদ্ধে।
অনেকে আবার বলছেন, এ ছাড়া আর উপায়ও ছিল না সিপ্রাসের। দেশ প্রায় দেউলিয়া। ব্যাঙ্ক, শেয়ার বাজার বন্ধ। পেনশন মিলছে না। এই অবস্থায় আচমকা অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ছাড়তে হলে চরম বিপদে পড়বে গ্রিস। তাই ত্রাণ পেতে কিছুটা পিছোতেই হত তাদের।
এখন নতুন প্রস্তাব গ্রিক পার্লামেন্টে পাশ হবে কি না, সে দিকে চোখ সকলের। সপ্তাহ না-ঘুরতেই ফের ভোট-সুতোয় ঝুলছে গ্রিসের ভবিষ্যৎ।