প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর সি রঙ্গরাজন। — ফাইল চিত্র।
দেশে আর্থিক বৃদ্ধির সুফল সমাজের একেবারে নীচের স্তরের মানুষের কাছেও পৌঁছনো জরুরি বলে মনে করেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সি রঙ্গরাজন। সম্প্রতি কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার আয়োজিত সমরকান্তি পাল স্মারক বক্তৃতায় এই অর্থনীতিবিদের বার্তা, উৎপাদন শিল্পের উন্নতি এমন ভাবে হওয়া দরকার, যা দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের নাগরিকদের কাজ দিতে পারে। প্রথমে কোভিড ও পরে মূল্যবৃদ্ধির আবহে যখন দেশে আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে ও বেকারত্বও চড়া, তখন রঙ্গরাজনের এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
মূল্যবৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধি এবং শ্লথ বিশ্ব অর্থনীতি ভারতের আর্থিক বৃদ্ধিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে, মনে করছে বহু মূল্যায়ন সংস্থা। কেউ পূর্বাভাস কমিয়ে ৭ শতাংশে নামাচ্ছে, কারও ইঙ্গিত তার থেকেও কম। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মঞ্চে দাবি করেছেন, ওই হার ৭.৫% হবে। রঙ্গরাজন বলেন, ‘‘জিডিপি বৃদ্ধির হার এ বার ৭ শতাংশের বেশি হওয়া কঠিন। ২০০৫-০৬ থেকে ২০১০-১১ সালের মধ্যে তা উল্লেখজনক ভাবে মাথা তুলে প্রায় ৮.৮% হয়েছিল। দারিদ্রসীমার নীচ থেকে উঠে এসেছিলেন অনেকে।’’ তাঁর বার্তা, দেশের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে হলে বছরে ৮%-৯% বৃদ্ধি জরুরি। কিন্তু এখন লগ্নি টানাই কেন্দ্রের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তার হার আর্থিক বৃদ্ধির ৩৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়া দরকার। এ জন্যে সরকারি এবং বেসরকারি, দু’ক্ষেত্রেরই পুঁজি পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিল্পের অগ্রগতির জন্য জরুরি উন্নত প্রযুক্তি, যাতে উৎপাদন বাড়ে। তবে তা যেন কর্মসংস্থান সঙ্কোচনের কারণ না হয়।
মাথা পিছু আয়ে ভারত বহু দেশের থেকে পিছিয়ে বলেও মনে করেন প্রাক্তন আরবিআই কর্তা। তাঁর সওয়াল, কত মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে রয়েছেন, তা যাচাই করতে গ্রাহকের খরচ সংক্রান্ত সমীক্ষা জরুরি।ইতিমধ্যেই ভারত-সহ বহু দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার কমাতে সুদ বৃদ্ধির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে রঙ্গরাজনের দাবি, শীর্ষ ব্যাঙ্কের এখন সুদ বৃদ্ধির নীতিই বহাল রাখা উচিত।
১৯৯১-এ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আনা সংস্কারগুলি অসমাপ্ত ছিল বলে সম্প্রতি বর্তমান অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে কেন্দ্র-বিরোধী তরজায় উত্তপ্ত হয়েছে রাজনীতি। রঙ্গরাজন বলেন, ওই সংস্কারে লাইসেন্স রাজ হটিয়ে শিল্পের লগ্নির পথ চওড়া করা, বৈদেশিক বাণিজ্য নীতিতে বদল এনে অর্থনীতিকে আরও খুলে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। তাঁর সওয়াল, সংস্কার জারি রাখা দরকার। তবে তা কার্যকর করতে হবে কেন্দ্র-রাজ্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে।