প্রতীকী ছবি।
এই গ্রীষ্মে তাপমাত্রা যত চড়েছে তত প্রকট হয়েছে দেশে কয়লার ঘাটতি। অভিযোগ উঠেছে, প্রয়োজন অনুযায়ী জোগান না থাকায় চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারছে না তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি। লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে অধিকাংশ রাজ্য। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য এই প্রথম সরাসরি কয়লা আমদানি পথে কোল ইন্ডিয়া (সিআইএল)। পশ্চিমবঙ্গের দুই সংস্থা, পিডিসিএল এবং সিইএসসি-কেও তা সরবরাহ করবে তারা।
বিশ্ব বাজারে চড়া দামের কারণে আমদানির কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছে। দেশীয় কয়লার মজুত কম পড়ায় বাকিরাও প্রয়োজন মতো উৎপাদন করতে পারেনি। তার পরেই বাধ্যতামূলক ভাবে কয়লা আমদানির নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। সমস্ত রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা এবং স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলিকে (আইপিপি) নির্দিষ্ট পরিমাণে বিশ্ব বাজার থেকে কিনে এনে দেশীয় মজুতের সঙ্গে মেশাতে বলে। কিন্তু চড়া দরে আমদানি নিয়ে বিদ্যুৎ কর্মী-ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন (এআইপিইএফ) ও বিরোধীরা আপত্তি তোলে। তার মধ্যেই আমদানির পথে হাঁটছে কোল ইন্ডিয়া। সে জন্য আন্তর্জাতির দরপত্র চেয়েছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলন ও সরবরাহকারী সংস্থাটি। প্রথম দফায় আমদানির লক্ষ্য ২৪ লক্ষ টন।
বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির হয়েই কয়লা আমদানির দায়িত্ব পেয়েছে সিআইএল। কেন্দ্রের হুঁশিয়ারি, আমদানি করা কয়লা না মেশালে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ সংস্থার দেশীয় জোগান কমানো হবে। তবে তারা চাইলে নিজেরাও বিদেশ থেকে কিনে আনতে পারবে। সিআইএল-এর মাধ্যমে কেনার জন্য বরাত পেশ করার সময়সীমা ছিল গত ৩১ মে। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ৩ জুন। কেন্দ্র জানিয়েছিল, যে বিদ্যুৎ সংস্থা বরাত দেবে না কিংবা নিজেরা আমদানির জন্য দরপত্র চাইবে না, তারা প্রয়োজনের ৭০ শতাংশের বেশি দেশীয় কয়লা পাবে না। ১৫ জুনের পরে জোগান আরও কমে হবে ৬০%। যারা আমদানির নির্দেশ মানবে, তাদের সেই বাকি কয়লা বরাদ্দ করা হবে।
সিআইএল জানিয়েছে, ২৬টি উৎপাদন সংস্থা আমদানির বরাত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৭টি রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থা এবং ১৯টি আইপিপি। পিডিসিএলের বক্তব্য, তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য সরকারের নির্দেশ মতো বছরে ১৫.৪ লক্ষ টন কয়লা আমদানি করে দেশীয় মজুতের সঙ্গে মেশাতে হবে। তারা ৫ লক্ষ টন কয়লা আমদানির বরাত দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। পিডিসিএলের দাবি, তাদের ভান্ডারে ১ লক্ষ টনেরও বেশি মজুত।
সিআইএলের অবশ্য বার্তা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণ দেশীয় কয়লার জোগানে ঘাটতি নয়। কারণ,এপ্রিল-মে মাসে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে তারা ১০.২৫ কোটি টন সরবরাহ করেছে। যা গত বছরের থেকে ১৬.৭% বেশি। বরং বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যার জন্য তারা তিনটি কারণকে দায়ী করেছে। সংস্থার এক আধিকারিকের দাবি, প্রথম কারণ কোভিডের পরে দেশে উৎপাদনের কর্মকাণ্ড আচমকা বেড়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, ১৫টি বিদ্যুৎ সংস্থারই আমদানির কয়লা ব্যবহার। যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে দরবাড়ার পরে কমেছে। ফলে প্রায় ৫০% বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। তৃতীয়ত, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি।
সংবাদ সংস্থার খবর, এআইপিইফ এখনও চড়া দরে কয়লা আমদানির বিরোধী। তাদের দাবি, রাজ্যগুলির কাঁধে বাড়তি বোঝা চাপাচ্ছে কেন্দ্র। সেই দায় তাদেরই নিতে হবে। তাদের আর্জি, কেন্দ্রের নির্দেশের বিরোধিতা করুন সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।