সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই
আগামি পাঁচ বছরে পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগের রোডম্যাপ প্রকাশ করল কেন্দ্র। ১০২ লক্ষ কোটির ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন (এনআইপি) ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আগামী ২০২৪-২৫ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ বছরের জন্য এই পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত ৬ বছরে মোদী সরকার পরিকাঠামো খাতে খরচ করেছে ৫১ লক্ষ কোটি টাকা। আগামী পাঁচ বছরের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ দ্বিগুণ। কিন্তু তাতেও অর্থনীতির শ্লথগতি, ছ’বছরে সর্বনিম্ন ডিজিপি বৃদ্ধির হার, বেকারত্ব বৃদ্ধি, শিল্পে ভাটার মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশ।
প্রথম ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বছরের স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, পরিকাঠামো খাতে সরকার ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়। তার পাঁচ মাস পর সেই পরিকল্পনা ঘোষণা করে নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘এটাই দেশের প্রথম এনআইপি।’’ এই ১০২ লক্ষ কোটির পাশাপাশি আরও ৩ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত যোগ হবে। প্রস্তাবিত এই এনআইপি-তে কেন্দ্র ও রাজ্যের ৩৯ শতাংশ করে অংশ থাকবে। বাকি ২২ শতাংশ বিনিয়োগ করবে বেসরকারি সংস্থা।
মোদীর ওই ঘোষণার পরেই পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগের রূপরেখা তৈরি করতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে টাক্স ফোর্স। বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী, রাজ্য সরকার, পরিকাঠামো সংক্রান্ত সংস্থা-সহ সংশ্লিষ্ট মোট ৭০টি পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তার পর তৈরি হয়েছে রিপোর্ট। সেই টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টই এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
নির্মলা জানিয়েছেন, পরিকাঠামো খাতে এই বিনিয়োগের আওতায় রয়েছে ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। তার মধ্যে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, রাজস্থান উল্লেখযোগ্য। এই প্রকল্পগুলি রয়েছে ২১টি মন্ত্রকের অধীনে। নির্মলা বলেন, এই ১০২ লক্ষ কোটি টাকা বিদ্যুৎ, রেলওয়ে, সেচ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ডিজিটাল, নগরোন্নয়ন, জল সংরক্ষণের মতো খাতে পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পাঁচ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্য পূরণের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু গত জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকেই জিডিপি বৃদ্ধির হার ছ’বছরে সর্বনিম্ন ৪.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। শিল্পে মন্দা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে গোটা অর্থনীতিই কার্যত মন্দার মুখে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও গতি আনতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও অন্য একটি অংশের মতে, হঠাৎ কোনও ঘোষণায় বা পরিকল্পনায় রাতারাতি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশা করা বৃথা। তবে প্রকৃতপক্ষেই এই পরিমাণ বিনিয়োগ হলে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে তা কাজে আসতে পারে।