বহু ছোট ব্যবসায়ীর জীবন বদলে দিয়েছে ফ্লিপকার্ট
ভারতে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মুদিখানার দোকান রয়েছে যা ভারতে আধুনিক খুচরো ব্যবসার ভিত্তি। মজার বিষয় হল, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে, গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাকে আরও মসৃণ করতে, এবং ইকোসিস্টেম পার্টনারদের সমৃদ্ধি বাড়াতে খুচরো ও ইকমার্সের প্রাচীন ও নবীন গঠনতন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশীয় ইকমার্সের বাজার হিসেবে ফ্লিপকার্ট তাদের ইকোসিস্টেমের অন্তর্গত প্রত্যেকের জন্য আলাদা করে বাজারমূল্য তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাদের মধ্যে রয়েছে খুচরো ব্যবসায়ী, দোকানদার, মুদিখানা, কারিগর ইত্যাদি।
২০১৯-এ শুরু হয় এই মুদিখানা ডেলিভারি প্রোগ্রাম। যেটি ছিল ভারতের ই-কমার্স নেতৃত্বাধীন বৃহত্তম ডেলিভারি প্রোগ্রামগুলির মধ্যে একটি। যার অন্তর্গত হয়েছিল প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি মুদির দোকান। তারা দেশ জুড়ে হওয়া ৬০ মিলিয়নের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও বেশি ডেলিভারি করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে সাধারণ দোকান, বিউটি পার্লার, গুদামঘর, এবং বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় ব্যবসা।
ফ্লিপকার্ট এই ব্যবসাগুলিকে ডেলিভারি করার জন্য প্রস্তুত করতে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে চলেছে। এগুলির জন্য ফ্লিপকার্টের একটি নিজস্ব দল রয়েছে যাঁরা এই ছোট ছোট দোকানগুলিকে পরিচালনা করার সঠিক জ্ঞান, নির্দেশনা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও সর্বোপরি অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে, যাতে এই ছোট ছোট দোকানগুলি নির্বিঘ্নে ডেলিভারি করতে পারে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এই পার্টনাররা গত বছর উৎসবের মরসুমে প্রায় ১ কোটিরও বেশি ডেলিভারি করেছিল।
শুধু তাই নয়, এই প্রোগ্রামটি পার্টনারদের জীবনযাত্রা উন্নত করে, দক্ষতার সঙ্গে পথ অতিক্রম করার বেশ কিছু অনুপ্রেরণামূলক গল্পও সামনে নিয়ে এসেছে।
যেমন ধরুন উত্তম নস্করের গল্প। কলকাতার বেহালায় একটি ছোট চায়ের দোকান চালাতেন উত্তম। মুদিখানা ডেলিভারি পার্টনার হিসেবে তিনি ফ্লিপকার্টের সঙ্গে ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। ম্যাট্রিক পাশ করেই উত্তম লজিস্টিকের পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও পেশাদার। শেষবার তিনি ফ্লিপকার্টের ডেলিভারি হাবে কাজ করেছিলেন। দূর্ভাগ্যবশত, ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে বাড়িতে থাকার দরুন তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। সেই সময়েই তাঁর হাব ইনচার্জ তাঁকে মুদিখানা ডেলিভারি পার্টনার হওয়ার পরামর্শ দেন।
উত্তমের কথায়, “আমার হাব ইনচার্জ এবং গোটা দল আমাকে ভীষণ সাহায্য করেছে। আমার সামনে আসা সমস্ত বাধা সরিয়ে দিয়ে আমায় এগিয়ে চলতে পেরেছি ফ্লিপকার্টের জন্যই। ভাল সংখ্যক ডেলিভারি শিপমেন্ট দিয়ে তাঁরা শুধু আমাকেই সাহায্য করেনি, সেই সঙ্গে আমার পরিবারের পাশে এসেও দাঁড়িয়েছে। ৩ মাস বসে থেকে ফের কাজ শুরু বেশ কঠিন। কিন্তু ফ্লিপকার্টের কারণেই আমি এই সুযোগ পেয়েছি এবং এতে আমি বেশ খুশিও।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, “একটি ভাল আয়ের সন্ধান দেওয়ার পাশাপাশি, ফ্লিপকার্ট এটিও নিশ্চিত করেছে যে সে যেন আরও উন্নতি করতে পারে এবং সেই কারণে ছোট্ট এলাকার মধ্যেই তাঁকে প্রচুর ডেলিভারি দেওয়া হয়।” বর্তমানে উত্তম যখন ডেলিভারির কাজে যান, তখন তাঁর মা ও পরিবার চায়ের দোকান দেখাশুনা করেন।
কলকাতার আরও এক ডেলিভারি পার্টনার জয়দীপ সেনগুপ্ত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ফ্লিপকার্টের সঙ্গে ডেলিভারি করছেন। সেনগুপ্ত স্টোর নামে তাঁর মুদি দোকানটি এলাকায় বেশি পরিচিতও। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য গ্রাহকরা নিয়মিত তাঁর দোকানে ভিড় জমান।
এক বন্ধুর থেকে এই প্রোগ্রামের বিষয়ে জানতে পারেন জয়দীপ। তিনি জানিয়েছেন, “এলাকায় সুপরিচিত হওয়ার দরুন স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যপকভাবে আমায় ডেলিভারি প্রোগ্রাম চালাতে সাহায্য করে। বিগ বিলিয়ন ডে চলাকালীন দিন কয়েক আমি ১০০টিরও বেশি প্যাকেজ ডেলিভারি করেছি। হাতে কিছু বাড়তি আয় থাকার ফলে আমি আমার সন্তানদের ভাল করে পড়াতে পারছি। প্রয়োজন অনুসারে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারছি।”
লকডাউনের সময় যখন বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছিল, তখন এই ডেলিভারি প্রোগ্রামটি দোকান মালিকদের যেন উদ্ধার করেছিল।
চণ্ডীগড়ের শুকবীর সিংহের ভাষায়, “লকডাউনের সময় ব্যপকভাবে আমার আয় কমে গিয়েছিল। পরিবারকে সাহায্য করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেই সময় এই ডেলিভারি প্রোগ্রাম যেন ত্রাতার মতো এসে আমায় উদ্ধার করে। এখন আমি ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে এই ডেলিভারি চালিয়ে যাচ্ছি। আমার জীবন অনেকটা উন্নত হয়েছে।” শুকবীর যখন ডেলিভারির জন্য যান, তখন তাঁর স্ত্রী দোকান সামলান। বর্তমানে তাঁর আয় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
শুকবীরের মতো কয়েক লক্ষ গ্রাহক ফ্লিপকার্টের এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাঁদের স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছেন। এই প্রোগ্রাম যে ধরনের সুযোগ তৈরি করেছে, তার কারণে প্রত্যেকের ব্যবসা অভূতপূর্ব ভাবে বেড়েছে। গ্রাহকের সন্তুষ্টি, সময়মতো ডেলিভারি, সঙ্গে পার্টনারদের ইচ্ছেমতো কাজের সময় প্রদান, এই ভাবেই তৈরি হয়েছে ফ্লিপকার্টের এই প্রোগ্রাম।
যে কোনও ছোট দোকানের মালিক, যাঁদের কাছে ছোট জায়গা রয়েছে এবং অতিরিক্ত সময় দিতে পারবেন, তাঁরা ফ্লিপকার্টের ডেলিভারি পার্টনার হতে পারেন। এই প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করার পরে, সেই ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয় এবং গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার জন্য বেশ কয়েকটি সহজ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এর পরেই ফ্লিপকার্টের প্রতিনিধিরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দোকানে যাবেন।
প্রথমে পার্টনারদের ৪ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেখানে একজন পার্টনারকে গ্রাহকদের ব্যবস্থাপনা, ডেলিভারি এবং পথ নিরাপত্তার বিষয়ে বিভিন্ন জিনিস সেখানো হয়। অনবোর্ডিং প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হলে পার্টনাররা শিপমেন্ট পাওয়া এবং ডেলিভারির জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেন। উপার্জনের সবটাই মাসে দু’বার পার্টনারদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি প্রদান করা হবে।
সাধারণত উৎসবের মরসুমে ফ্লিপকার্টের মুদিখানা ডেলিভারি পার্টনাররা তাঁদের আয় বৃদ্ধি করার চমৎকার সুযোগ পেয়ে থাকেন।