ফ্ল্যাট-বাড়ি তৈরির খরচ এত বেড়েছে যে, তার বোঝা আর বইতে পারছে না নির্মাণ সংস্থাগুলি।
কাঁচামালের দাম আকাশছোঁয়া। চড়া ডিজ়েল। ফলে পরিবহণ খাতে অনেক বেশি টাকা লাগছে। আবাসন শিল্পের সংগঠন ক্রেডাইয়ের দাবি, এর জেরে ফ্ল্যাট-বাড়ি তৈরির খরচ এত বেড়েছে যে, তার বোঝা আর বইতে পারছে না নির্মাণ সংস্থাগুলি। ফলে আগামী এক বছরে রাজ্যে সেগুলির দাম গড়ে ১০% বাড়তে পারে। পশ্চিমবঙ্গ মূলত অ্যাফর্ডেবল বা কম দামি আবাসনের বড় বাজার। ফলে দাম বৃদ্ধির খাঁড়াতে ভুগবেন সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।
শিল্প সূত্রের খবর, এ রাজ্যে আবাসনের ৯৫% কম দামি। তাই সেই অংশেরই দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। কারণ শিল্পকর্তাদের মতে, দামি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে জমির পেছনে খরচ হয় বেশি। যা হালে তেমন বাড়েনি। কিন্তু কম দামি ফ্ল্যাটগুলিতে নির্মাণ খরচের অংশ বেশি, যা অনেকটা বেড়েছে।
কোভিড হানার পরে চাহিদার অভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল আবাসন শিল্প। কিছুটা সুরাহা দিতে মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যের পথে হেঁটে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড় দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ছাড় দেওয়া হয়েছে জমি কিংবা আবাসনের এলাকা ভিত্তিক সরকার নির্ধারিত দামেও (সার্কল রেট)। এতে ফ্ল্যাট কেনা ও নথিভুক্তকরণের খরচ কমায় স্বস্তি পেয়েছেন বহু ক্রেতা। আবাসনের বিক্রি ও রেজিস্ট্রেশন বেড়েওছে। কিন্তু চড়া কাঁচামাল ও জ্বালানির দাম সেই স্বস্তি ছিনিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা ক্রেডাই কর্তাদের।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথমে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ও পরে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত স্টাম্প ডিউটি এবং সার্কল রেটে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান ক্রেডাই-ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট সুশীল মোহতা, ক্রেডাই-বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট নন্দু বেলানি-সহ অন্যান্য কর্তারা। তবে তাঁদের দাবি, নির্মাণের জন্য কাঁচামালের খরচ এক বছরে বেড়েছে প্রায় ১২%। চড়া ডিজ়েলের কারণে পরিবহণ খরচ মাত্রাছাড়া। তার উপরে আবাসন শিল্প এখন আর জিএসটিতে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের (কাঁচামালে মেটানো কর ফেরত পাওয়া) সুবিধা পায় না, বলছেন ক্রেডাই কর্তা সিদ্ধার্থ পানসারি। তাঁর মতে, এর ফলে বর্গ ফুটে খরচ এখন ৩৫০-৪০০ টাকা বেড়েছে। ফলে আর্থিক বোঝায় কাহিল আবাসন শিল্প। উত্তরবঙ্গে ক্রেডাইয়ের প্রেসিডেন্ট নরেশ আগরওয়ালের দাবি, কলকাতার তুলনায় খরচ বৃদ্ধির হার বেশি উত্তরে। অথচ সিংহভাগ আবাসন কম খরচের তালিকায় থাকায় মুনাফার অংশ কম। ফলে নির্মাণ সংস্থার মূলধনে টান পড়ছে।
ফ্ল্যাটের দাম বাড়লে সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতার বোঝা বাড়বে, মানছেন সুশীল। তবে একই সঙ্গে বলছেন, ‘‘শিল্পকেও বাঁচতে হবে। না-হলে নতুন প্রকল্প গড়ব কী করে?’’ তবে তাঁদের ধারণা, এ জন্য চাহিদায় তেমন প্রভাব পড়বে না।