ফাইল চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা না-নামানোয় অনেকেই আঁচ করেছিলেন, অক্টোবরের ঋণনীতিতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না। শুক্রবার দেখা গেল সন্দেহ সত্যি হয়েছে। তবে এতে শেয়ার বাজার মুষড়ে তো পড়েইনি, বরং কিছুটা তেতে উঠেছে। শুক্রবার সেনসেক্স ৩২৭ পয়েন্ট উঠে পৌঁছয় ৪০,৫০৯ অঙ্কে। অথচ ওই দিন সুদ (রেপো রেট, যে সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) অপরিবর্তিত রাখার পাশাপাশি আরবিআই মেনে নিয়েছে চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি-র সঙ্কোচন হতে পারে ৯.৫%। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুমানের (৯.৬%) মতোই। গত শুক্রবার পর্যন্ত টানা সাত দিন উঠেছে বাজার। তার মধ্যে গত সপ্তাহের পাঁচ দিনেই সেনসেক্সের উত্থান প্রায় ১৮১২ পয়েন্ট বা ৪.৬৮%।
অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, উৎসবের মরসুমে কেনাকাটা একটু বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে চাহিদাকে চাঙ্গা রাখতে গেলে সরকারকে রাজকোষের টাকা খরচ করতে হবে। তা-ও আবার দীর্ঘ সময় ধরে। তবু কোনও হুঁশিয়ারিতে কান না-দিয়ে অনিশ্চিত বাজার আশায় ভর করে থিতু হতে চাইছে। করোনার দাপটে হাঁপিয়ে ওঠা লগ্নিকারীরা মনে করছেন আগামী যতই আশঙ্কার হোক, কল-কারখানায় কিছুটা হলেও তো উৎপাদন বেড়েছে। পরিষেবা সূচক বৃদ্ধির বৃত্তে পা না-রাখলেও, আগের থেকে উন্নতি করেছে। কৃষিতেও রেকর্ড ফলনের আশা। যেটা সত্যি হলে আনাজের দাম মাথা নামাতে পারে। লাগাম পড়ানো যেতে পারে মূল্যবৃদ্ধির হারে। এই আশাকেই শুক্রবার উস্কে দিয়েছেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। তাঁর ইঙ্গিত—
• আর্থিক বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। চলতি অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) থেকেই ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।
• দেশে সংক্রমণের সংখ্যা কমতে থাকায় সমস্যার চারপাশে রুপোলি রেখা দেখা যাচ্ছে।
• মূল্যবৃদ্ধি সহনসীমা ছাড়িয়ে গেলেও, পণ্যের সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হলে তা কমতে শুরু করবে।
• এ বার সুদ না-কমানো হলেও, আগামী দিনে তা কমানোর পথ
খোলাই থাকছে।
• ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ঢালা হবে ১ লক্ষ কোটি টাকা।
• চাহিদা বাড়াতে খোলা হচ্ছে গৃহঋণে সুদ কমানোর পথও।
বাজারকে শক্তি জুগিয়েছে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) টিসিএসের আর্থিক ফল এবং বাজার থেকে নিজেদের শেয়ার কিনে ফেরানোর ঘোষণাও। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় লাভ কমলেও, এপ্রিল-জুনের তুলনায় তা ৬.৭% বেড়ে পৌঁছেছে ৭৪৭৫ কোটি টাকায়। তার উপরে দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি ১৬,০০০ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার ফেরাবে। এর জেরে টিসিএসের শেয়ার দর বেড়ে শুক্রবার ছুঁয়েছে ২৮১৫ টাকা, যা সূচকের উত্থানে অনেকটাই মদত জুগিয়েছে। সংস্থাটি শেয়ার পিছু ১২ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ দেবে শেয়ারহোল্ডারদের।
(মতামত ব্যক্তিগত)