প্রতীকী চিত্র।
বাজেটের হিসেব মেলাতে এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণই ভরসা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের।
সেই লক্ষ্যে শুধু এর হাত ধরে বড় আয়ের লক্ষ্য বাঁধা নয়, দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংজ্ঞাটাই বদলাতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যাতে শেয়ার বেচার পথ সহজ হয়। সরকারি শীর্ষমহল সূত্রে খবর, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে নীতি আয়োগ কথা বলছে। এতদিন কোনও সংস্থার ৫১% অংশীদারি কেন্দ্রের হলে তাকে রাষ্ট্রায়ত্ত বলা হত। সেই সংজ্ঞাই পাল্টানোর কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে এক দিকে সেগুলির বেশি শেয়ার বেচে রাজকোষ ভরা যায়, অন্য দিকে সংস্থাগুলিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তকমাও খোয়াতে না হয়।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে দাবি, এ বার অন্তর্বর্তী বাজেটে কর থেকে যে আয়ের লক্ষ্য স্থির হয়েছে, তা ছোঁয়া মুশকিল। বিলগ্নিকরণ থেকে সেই অভাবই পূরণের কথা ভাবতে হচ্ছে। যাতে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া না হয়। শুক্রবারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিলগ্নিকরণ থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি আয়ের লক্ষ্য বাঁধতে পারেন।
বিষয়টির অবশ্য ঘোর বিরোধী সঙ্ঘ-পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)। শ্রমিক সংগঠন বিএমএস সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাঁচাও অভিযানের ডাক দিয়েছে। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও জানিয়েছে আপত্তির কথা।
ভরসা অটুট
২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ থেকে কেন্দ্র আয়ের লক্ষ্য বেঁধেছিল ৭২,৫০০ কোটি টাকা। বছর শেষে রাজকোষে ঢোকে ১ লক্ষ কোটি। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে আয়ের লক্ষ্য স্থির করা হয় ৮০,০০০ কোটি। বাস্তবে বিলগ্নির অঙ্ক ছোঁয় ৮৫,০০০ কোটি। চলতি অর্থবর্ষের অন্তর্বর্তী বাজেটে বিলগ্নিকরণের পথে রোজগারের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ৯০,০০০ কোটি। সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, আসন্ন সাধারণ বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ কোটি করতে পারেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল-মে মাসে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় তাদের শেয়ার বেচে কেন্দ্র ঘরে তুলেছে ২,৩৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ কোটি টাকার বিলগ্নিকরণ হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে বিলগ্নিকরণের ৫৮ শতাংশই হয়েছে মোদী জমানায়।
লক্ষ্য পূরণে
রাজকোষ ঘাটতি সামলাতে জোর মূলত বিলগ্নিকরণেই। সেই রাস্তা সহজ করতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংজ্ঞা বদল চায় মোদী সরকার।
এখন রাষ্ট্রায়ত্ত বলতে...
কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে যে সব সংস্থার অন্তত ৫১% অংশীদারি রয়েছে, সেগুলি।
কেন্দ্রের ভাবনা
কেন্দ্রের হাতে অন্তত ৫১% রাখার বাধ্যবাধ্যকতা তুললে ভাল। সংস্থায় তা ৫১ শতাংশের কম হলেও, অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারের থেকে যদি বেশি হয়, তবে তাকেও বলা হতে পারে রাষ্ট্রায়ত্ত। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে যতটা বেশি সম্ভব শেয়ার বিক্রির রাস্তা সহজ করতেই সংজ্ঞা বদল জরুরি।
ইতিমধ্যেই নীতি আয়োগ ৫০টির বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিলগ্নির জন্য চিহ্নিত করেছে। অর্থ মন্ত্রকের দাবি, তালিকায় এনটিপিসি, সিমেন্ট কর্পোরেশন, ভারত আর্থ মুভার্স, সেল-এর মতো সংস্থার জমি, কারখানার যন্ত্রপাতি রয়েছে। ভাবা হচ্ছে ওএনজিসি, কোল ইন্ডিয়া, এনটিপিসি, অয়েল ইন্ডিয়ার মতো সংস্থায় কেন্দ্রের মালিকানা ৫১ শতাংশের কাছে নামানোর কথা। ফের এয়ার ইন্ডিয়ার অংশীদারি বেচার চেষ্টা করবে কেন্দ্র। কিছু ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অন্যটিকে কিনতেও পারে।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশা, গত দুই অর্থবর্ষেই বিলগ্নিকরণ থেকে বাজেট লক্ষ্যের বেশি আয় হয়েছে। এ বার পাখির চোখ ১ লক্ষ কোটির বেশি হলেও তির নিশানা ছোঁবে।