Coronavirus Lockdown

পড়তি সুদ চাপ বাড়াবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ে 

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শুক্রবার ফের এক দফা সুদ কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৪:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি

গত সপ্তাহ শুরু হয়েছিল মোদী সরকারের শেষ দফার ত্রাণ প্রকল্পের কাটাছেঁড়া দিয়ে। আর শেষ হল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর ঘোষণায়। তার মধ্যেই বুধবার ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপটে যখন লন্ডভন্ড রাজ্য, তখন কিছুটা নিঃশব্দে আর্থিক প্যাকেজের একগুচ্ছ প্রস্তাব পাশ করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যার প্রভাব সরাসরি পড়বে সুদ নির্ভর বয়স্ক মানুষের উপরে। সেটি হল, প্রধানমন্ত্রী বয়ো বন্দনা যোজনার সময়সীমা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো। তবে ৮% থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে প্রকল্পটির সুদ। চলতি বছরের জন্য তা ধার্য করা হয়েছে ৭.৪%। আগামী দিনে ১০ বছরের এই প্রকল্পের সুদ স্থির হবে প্রতি অর্থবর্ষে। যাঁরা ঝুঁকিহীন সুদ নির্ভর প্রকল্পে লগ্নি পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে এটা ভাল খবর নয়।

Advertisement

করোনার ধাক্কায় জেরবার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে টানা পাঁচ দিন ধরে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছে সরকার। সেই সঙ্গে চতুর্থ দফার লকডাউনে ধাপে ধাপে ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রকে। পর্যায়ক্রমে শুরু হচ্ছে গণপরিবহণ। তবে বাজারের আশা ছিল ত্রাণ প্রকল্পে এমন কিছু থাকবে, যা সূচকের পালে গতি ফেরাবে। কিন্তু প্রকল্পের বিশ্লেষণ করে মুষড়ে পড়েছেন লগ্নিকারীরা। ফলে সোমবার ধস নামে বাজারে। এক ধাক্কায় সেনসেক্স পড়ে যায় ১০৬৯ পয়েন্ট (৩.৪৪%)। কোনও মতে থেকে যায় ৩০ হাজারের উপরে।

এ দিকে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শুক্রবার ফের এক দফা সুদ কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে রেপো রেটকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৪ শতাংশে। এতেও খুশি নয় বাজার। শুক্রবার সেনসেক্স নেমেছে ২৬০ পয়েন্ট। নিফ্‌টি ৬৭ পয়েন্ট। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সরাসরি মানুষের হাতে টাকা দিয়ে চাহিদা বাড়ানোর বদলে ঋণের কথাই বেশি রয়েছে কেন্দ্রের প্যাকেজে। তাই শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেও লগ্নিকারীদের প্রশ্ন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ধার নেওয়ার মতো মানুষ কোথায়?

Advertisement

অনেকের মতে, গত বছর থেকে টানা সুদ কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তাতেও অর্থনীতির হাল ফেরানো যায়নি। উল্টে ৮ মে শেষ হওয়া ১৫ দিনে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির দেওয়া ঋণ কমেছে ২১,০০০ কোটি টাকা। একই সময়ে আমানত বেড়েছে ১.২৭ লক্ষ কোটি। মন্দার বাজারে নতুন করে ঋণ নিতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা। এই ঋণ বোঝা হয়ে উঠতে পারে ব্যাঙ্কের কাছেও। ব্যবসায় মুনাফা না-হলে বাড়তে পারে অনাদায়ি ঋণ। মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংসেরও ধারণা, নতুন ঋণের ৫.৭ লক্ষ কোটি অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হতে পারে। এই সব মাথায় রেখে গত ক’দিনে ভাল রকম পড়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শেয়ার দর।

তার উপরে বাজার যখন দোলাচলে, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোয় তার হার নামবে আমানতে। ফলে আয় কমবে মানুষের, বিশেষত প্রবীণদের। এমনিতেই সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে এপ্রিল থেকে সুদ কমে হয়েছে ৭.৪%। তা কমেছে অন্যান্য ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে। আর এ বার কমছে বয়ো বন্দনার সুদও। তবে এর মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক প্রবীণদের জন্য বিশেষ জমা প্রকল্প ঘোষণা করেছে। যাতে সুদের হার ৬.৫ শতাংশের আশেপাশে। আগের ৫০ বেসিস পয়েন্টের তুলনায় প্রবীণেরা সুদ পাবেন অতিরিক্ত ৮০ বেসিস পয়েন্ট। তবে লগ্নি করতে হবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। যাঁরা প্রবীণ নন, তাঁদের ক্ষেত্রে সর্বাধিক সুদের হার দাঁড়াবে ৫.৭%। সেই সব লগ্নিকারীর মধ্যে যাঁরা ৩০% করের আওতায় পড়েন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রকৃত সুদ দাঁড়াবে ৩.৯২%।

সব মিলিয়ে সুদের হার এতটা কমে আসার চাপ যে আমজনতার সঞ্চয়ে পড়বে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে যাঁরা করোনা-সঙ্কটে চাকরি হারিয়েছেন এবং যাঁরা সুদ নির্ভর, তাঁদের সমস্যা হবে বেশি।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন: বিদ্যুতে প্রতিযোগিতা চান বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement