দেউলিয়া বিধি পর্ষদের (আইবিবিআই) চেয়ারপার্সন এম এস সাহু।
এসার স্টিল নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় দেউলিয়া বিধি কার্যকরের গোটা প্রক্রিয়াটাকেই বদলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। দেউলিয়া বিধি পর্ষদের (আইবিবিআই) চেয়ারপার্সন এম এস সাহুর দাবি, বিধি কার্যকরের মাঝপথে সেই প্রক্রিয়ার গতি রোধ করার যে চেষ্টা চলে অনেক সময়, তা-ও বন্ধ হবে এতে। তাঁর দাবি, এই নির্দেশ থেকে দেউলিয়া বিধির মূল উদ্দেশ্য ও কাঠামোকে খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হল।
দেউলিয়া আইনে এসার স্টিল বিক্রি নিয়ে এনসিএলটির আপিল আদালতের (এনসিএলএটি) নির্দেশ গত শুক্রবার খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে ৪২,০০০ কোটি টাকা দিয়ে ইস্পাত সংস্থাটি কেনার পথে বাধা দূর হল আর্সেলর মিত্তলের। যার হাত ধরে ভারতে পা রাখার দিকে এক ধাপ এগোতে পারবে লক্ষ্মী মিত্তলের সংস্থাটি। এ বছরের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সংস্থার তরফে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এই রায় ভবিষ্যতে দেউলিয়া বিধির অধীনে অন্যান্য মামলাকেও দিশা দেখাবে
২০১৭ সালের অগস্টে এনসিএলটিতে এসার স্টিল বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঋণদাতাদের কমিটির আর্সেলর মিত্তলের ৪২,০০০ কোটি টাকার দরপত্রে সম্মতিও দেয়। কিন্তু সেই পাওনার আনুপাতিক ভাগ দাবি করে এসার স্টিলের পাওনাদারেরা (ভেন্ডর)। জুলাইয়ে এনসিএলএটি জানায়, পাওনার টাকা আনুপাতিক হারেই ভাগ করতে হবে ঋণদাতা ও পাওনাদারদের মধ্যে। যাদের পাওনা ১ কোটি টাকার নীচে তাদের ১০০% বকেয়া মেটাতে হবে। তার বেশি হলে ৬০.৭%। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ঋণদাতাদের কমিটি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। শীর্ষ আদালত জানায়, উদ্ধার হওয়া টাকায় ঋণদাতা এবং পাওনাদারদের অধিকার সমান হতে পারে না। ঋণদাতা কমিটির সিদ্ধান্তও যেন কোনও ভাবে বাধাপ্রাপ্ত না-হয়।
এই প্রেক্ষিতে সাহু জানিয়েছেন, বকেয়ার দাবি জানানো বিভিন্ন পক্ষ, ঋণদাতাদের কমিটি, রেজলিউশন প্রফেশনাল ও বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরের ভূমিকা খুব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে। বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঋণদাতাদের সংখ্যাগুরু অংশ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। প্রক্রিয়ার মাঝ পথে হঠাৎ ভেসে ওঠা দাবিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে না। বিধি অনুযায়ী, মামলা নিষ্পত্তির ৩৩০ দিন সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চলবে। বকেয়ার টাকা কী ভাবে বণ্টন করা হবে স্পষ্ট করা হয়েছে তার রূপরেখাও। সব মিলিয়ে এত দিন অস্পষ্ট থাকা বেশ কিছু বিষয় এসার রায়ে স্পষ্ট হয়েছে বলে মত দেউলিয়া পর্ষদ কর্তার। এই প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়েছেন, তিন বছর আগে দেউলিয়া বিধি কার্যকর হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর অধীনে ২৫৪০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯৭টি চলছে। আর রায় হওয়া বাকি প্রতিটি এই বিধিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
এ দিকে সরকারি সূত্রের খবর, ঋণখেলাপি বা দেউলিয়া সংস্থার বিরুদ্ধে পুরোনো মামলাগুলির প্রভাব যাতে সেগুলির অধিগ্রহণকারীদের উপরে না-পড়ে, সেই লক্ষ্যে দেউলিয়া বিধি সংশোধনের পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংশোধনী পেশ হতে পারে। সূত্রের দাবি, কেন্দ্রের আশা এতে দেউলিয়া বিধি কার্যকরের প্রক্রিয়া আরও সফল হবে। বহু বড় সংস্থা উৎসাহী হবে ঋণগ্রস্ত সংস্থাগুলিকে কিনতে।