নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ধুঁকছে গোটা বিশ্ব। কাজ খুইয়ে বাড়িতে বসে রয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু অতিমারির আঁচও টের পাননি বিশ্বের তাবড় ধনকুবেররা। বরং গত এক বছরে সামগ্রিক ভাবে নিজেদের সম্পত্তির পরিমাণ ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নিয়েছেন তাঁরা।
আমেরিকার আর্থিক সংস্থা ব্লুমবার্গের হিসেব অন্তত এমনটাই বলছে। বিশ্বের প্রথম ৫০০ ধনকুবেরের সম্পত্তির দৈনিক ওঠাপড়ার হিসেব রাখে তারা। সোমবার বাজার বন্ধের পর যে হিসেব সামনে এসেছে, তাতে বিল গেটসকে ছাপিয়ে গিয়েছেন এলন মাস্ক। তবে প্রথম দশে একমাত্র ভারতীয় বলতে মুকেশ অম্বানীই।
তালিকায় একেবারে শীর্ষে রয়েছেন অ্যামাজন কর্তা জেফ বেজোস। এই মুহূর্তে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে মাইক্রোসফ্ট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে টপকে প্রথম শীর্ষে উঠে আসেন তিনি। তার পর থেকে বরাবর নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন তিনি।
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন টেসলা কর্ণধার ইলন মাস্ক। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। বিল গেটসকে টপকে গিয়েছেন তিনি। টেসলার বাজারমূল্য ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়াতেই তাঁর এমন উত্থান বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
ব্লুমবার্গের তালিকায় তৃতীয় ধনী ব্যক্তি মাইক্রোসফ্ট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। গত ৮ বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এমন ঘটল যে, দ্বিতীয় স্থান থেকে নেমে এলেন গেটস। এই মুহূর্তে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১২ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার।
তবে ধনকুবেরদের মধ্যে গেটসই সবচেয়ে বেশি দানধ্যানের জন্য পরিচিত। ২০০৬ সাল থেকে নিজের বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনেই তিনি প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দান করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ফরাসি শিল্পপতি বার্না আর্ন। মোট ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। বিশ্বের বৃহত্তম বিলাস সামগ্রী প্রস্তুতকারক সংস্থা লুই ব্যুঁত মোয়ে হেনেসি (এলভিএমএইচ)-র চেয়ারম্যান এবং চিফ এগজিকিউটিভ তিনি।
রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, ঘৃণাভাষণ ছড়ানোয় সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বছরভর সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গকে। তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন তিনি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের চেয়ারম্যান তথা সিইও ওয়ারেন বাফে তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮ হাজার ৬০৮ কোটি ডলার।
সার্চ ইঞ্জিন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮ হাজার ১০৩ কোটি ডলার।
গুগলের সহ প্রতিষ্ঠাতা সেরগে ব্রিন তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ হাজার ৮০৭ কোটি ডলার। গত বছর অ্যালফাবেট আইএনসি-র দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান ল্যারি ও সেরগে। গুগল, ইউটিউব এবং অ্যান্ড্রয়েড, তিনটিরই দায়িত্বে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুন্দর পিচাই।
একসময় মাইক্রোসফ্টের সিইও নিযুক্ত ছিলেন স্টিভ বলমার। এই মুহূর্তে আমেরিকার বাস্কেটবল দল লস অ্যাঞ্জেলস ক্লিপার্সের মালিক তিনি। তালিকায় নবম স্থানে রয়েছেন স্টিভ। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ হাজার ৬০১ কোটি ডলার।
ভারতীয় শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী তালিকায় দশম স্থানে রয়েছেন। করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্ব যখন কাবু, সেইসময়ও একের পর এক বিদেশি বিনিয়োগ টেনে রিলায়্যান্সকে দেনামুক্ত করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
ধনকুবেরদের এই তালিকায় আমেরিকান শিল্পপতিদেরই রমরমা। প্রথম ১০০ জনের মধ্যে ৩৬ জনই সে দেশের বাসিন্দা। সব মিলিয়ে ধরলে ৫০০ জনের তালিকায় ৭৫ জনই আমেরিকান। তবে তাদের কড়া টক্কর দিচ্ছে চিন। ৫০০ ধনকুবেরের মধ্যে ৭১ জন চিনা নাগরিক। তাঁদের মধ্যে ২০ জন আবার প্রথম ১০০-য় জায়গা করে নিয়েছেন। তবে প্রথম দশে কোনও চিনা শিল্পপতির ঠাঁই হয়নি। আলিবাবা কর্ণধার জ্যাক মা তালিকায় ২২তম স্থানে রয়েছেন। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫ হাজার ৪০৮ কোটি ডলার। ৫০০ জনের তালিকায় হংকংয়ের ১৭ জন শিল্পপতি রয়েছেন।
৫০০ জনের এই তালিকায় মুকেশ অম্বানী-সহ ১৬ জন ভারতীয় শিল্পপতি রয়েছেন। তালিকায় ৪০তম স্থানে রয়েছেন গৌতম আদানি। ৫৬তম স্থানে রয়েছেন আজিম প্রেমজি। ৭১তম স্থানে রয়েছেন শিব নাডার। এ ছাড়াও। তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন উদয় কোটাক, সাইরাস পুনাওয়ালা, লক্ষ্মী মিত্তল। রাধাকিষান দামনি, দিলীপ সাংভি, সুনীল মিত্তল, নুসলি ওয়াদিয়া, বেণুগোপাল বাঙ্গুর, সাবিত্রী জিন্দর, কুমার বিড়লা, বিক্রম লাল এবং রাহুল বজাজ।