অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। —ফাইল চিত্র।
দেশ জুড়ে আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে বলে বহু দিন ধরেই সতর্ক করছেন অর্থনীতিবিদেরা। সমাজের একটা বড় অংশের হাতে কাজ না থাকা যার অন্যতম কারণ বলে দাবি তাঁদের। মঙ্গলবার ফের তেমনই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। টুইটে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকাশিত ২০২২ সালের বেকারত্বের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে দেখা গিয়েছে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্ব চড়া যে সমস্ত দেশে, ২৩.২% হার নিয়ে তার অন্যতম ভারত। কৌশিক বলেছেন, ভারতের অর্থনীতি সার্বিক ভাবে বাড়ছে ঠিকই। তবে সেটা একটা অংশের হাত ধরে। কিছু ধনী আরও বিত্তবান হচ্ছেন বলে। বাকিরা কার্যত ‘মন্দায়’। তাঁর মন্তব্য, বেকারত্বের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেশের একটা বিরাট অংশে থেমে যাওয়া বৃদ্ধিকেই প্রকট করছে। ভারতের মতো প্রতিভাবান মানুষে ঠাসা দেশের এমন অবস্থা হওয়া উচিত নয়, আক্ষেপ বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদের।
বেকারত্বের প্রশ্নে কেন্দ্রকে বিঁধেছে বিরোধীরাও। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, মোদী সরকার যখন দাবি করছে ভারত বিশ্বের অন্যতম শক্তি কেন্দ্র হয়ে উঠবে, ঠিক তখনই বিশ্ব ব্যাঙ্ক দেখিয়েছে যে সমস্ত দেশের যুব সম্প্রদায় সব থেকে বেশি কর্মহীনতায় ভুগছে, তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ভারত। তাঁর দাবি, ‘‘এটা শুধু দেশের অর্থনীতির ধ্বংস হওয়া নয়, জনসংখ্যার বিচারে যে সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, তারও।’’
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের ক্ষোভ, এই সরকার জিএসটি খাতে নজিরবিহীন রাজস্ব আদায় নিয়ে নাচানাচি করছে, যেটা প্রত্যাশিত কিছু অঙ্কের হিসাব ছাড়া কিছু নয়। অথচ নজিরবিহীন ভাবে ৩ কোটিরও বেশি পরিবার যে মে মাসে রোজগারের জন্য ১০০ দিনের কাজের দাবি করেছে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ। তাঁর কথায়, ‘‘যতই জিডিপি বৃদ্ধি এবং জিএসটি আয়কে শিরোনাম হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হোক, তা বেশিরভাগ মানুষ যে দুর্দশার মুখে পড়েছেন তাকে আড়াল করতে পারবে না। একশো বছরে এক বার আসা অতিমারির সময় ১০০ দিনের কাজের জন্য যে দাবি উঠেছিল, তাকে-ও ছাপিয়েছে মে মাসের চাহিদা। এর থেকে বোঝা যায় গ্রামে আর্থিক দুর্দশা কোথায় পৌঁছেছে।’’ এপ্রিল-মে নাগাদ এই কাজের চাহিদা বেশি থাকে। তবে গত মাসে ছিল নজিরবিহীন।
সতর্কবার্তা এসেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট, ভারতীয় বংশোদ্ভূত অজয় বঙ্গার তরফেও। চলতি অর্থবর্ষে এ দেশে বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, দারিদ্রকে নামিয়ে আনা এবং সমাজের সব স্তরে উন্নয়ন ছড়ানোর নিশ্চিত রাস্তা কর্মসংস্থানই। কিন্তু বৃদ্ধির ঢিমে গতি কাজের সুযোগ তৈরিতে বাধা। তবে বিশ্ব ব্যাঙ্কের দাবি, গত জানুয়ারি-মার্চে ভারতে বেকারত্বের হার কমে হয়েছে ৬.৮%। যা কোভিড হানার পরে সব থেকে কম। কাজের বাজারে অংশগ্রহণও বেড়েছে।