অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বুধবার জানিয়েছে, ভারতে গত অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.২%। বিজেপি প্রত্যাশিত ভাবেই ৭ শতাংশের পূর্বাভাস ছাপানো এই ফলকে নিজেদের সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে। তবে বৃহস্পতিবার অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর দাবি, ৭.২% বৃদ্ধির হার দেখতে ভাল লাগলেও বাস্তবে হতাশাজনক। কারণ যার উপরে পা রেখে এই তুলনা, সেই ভিতটাই নীচে নেমে গিয়েছে। তাঁর ইঙ্গিত, আসলে বৃদ্ধি যতটা দেখা যাচ্ছে, তার থেকে অনেক কম। বিজেপি অবশ্য আর্থিক বৃদ্ধির হারকে হাতিয়ার করে এ দিন কংগ্রেসনেতা রাহুল গান্ধীকে বিঁধেছে। কটাক্ষ করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনকেও।
বিরোধী-সহ বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, শুধু আর্থিক বৃদ্ধির হারটুকুতে চোখ রাখলে চলবে না। খতিয়ে দেখলে স্পষ্ট হবে গত অর্থবর্ষের শেষের বেশ কিছুটা সময় জুড়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছিল চড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং সুদের জেরে। চাহিদা, কেনাকাটা, উৎপাদন তলিয়ে গিয়েছে। আরও প্রকট হয়েছে আর্থিক বৈষম্য।
এ দিন কৌশিক টুইটে বলেন, ‘‘২০২২-২৩ সালে ভারতের ৭.২% আর্থিক বৃদ্ধির হার দেখতে ভাল। কিন্তু আপনি হতাশ হবেন, যখন দেখবেন ২০২০-২১ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ছিল -৫.৮% (পৃথিবীর ন্যূনতম বৃদ্ধির দেশগুলির মধ্যে অন্যতম), যা ভিতটাকেই (যার সঙ্গে তুলনা করে অঙ্ক কষা হয়) নীচে নামিয়ে দিয়েছে, যেখান থেকে ভারতের বৃদ্ধির হার হিসাব করা হয়েছে।’’ তাঁর মতে, ২০২০-২৩ সালে দেশে বার্ষিক বৃদ্ধির হার আসলে দাঁড়াবে ৩.২৮%। যা প্রতিভাবান মানুষে ভরা একটি দেশের পক্ষে একটু বেশিই কম।
বিজেপি অবশ্য বৃদ্ধির হারকে সামনে রেখে বিরোধীদের দুষছে। এ দিন দলের নেতা এবং প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, বাজারে হতাশা, ঘৃণা এবং অবিশ্বাস ছড়াচ্ছেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ, ঘৃণা দূর করতে ভালবাসা ছড়াচ্ছেন বলে গান্ধী যেদাবি করছেন, তা আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের উন্নয়নের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোরএকটা অজুহাত। তাঁর কথায়, ‘‘জিডিপির পরিসংখ্যান আপনার ঘৃণার মিথ্যে কারবার সকলের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছে।’’
এর আগে রঘুরাম রাজন বলেছিলেন, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল-জুনে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ১৩ শতাংশের বেশি। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা কমে হয় ৬.৩%। অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৪.৪%। ফলে নামতে থাকা বৃদ্ধির এই হার বিপজ্জনক। বিশেষত জানুয়ারি-মার্চে যেহেতু তা আরও নামতে পারে (৪.২%) বলেছে আরবিআই। কোথা থেকে দেশ গতি বৃদ্ধির রসদ পাবে, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
এ দিন রবিশঙ্কর প্রসাদ রাহুলের সঙ্গে রাজনের এক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিরোধী নেতা দাবি করেছিলেন ভারতের রফতানি শ্লথ হচ্ছিল এবং দেশ ৫% আর্থিক বৃদ্ধি দেখলেও সেটা সৌভগ্য মনে করতে হবে। তার পরেই রাজনকে বিঁধে তিনি বলেন, প্রচারের জন্য আনা বিশেষজ্ঞদের প্রতিটি অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষত জানুয়ারি –মার্চেও যেহেতু বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা ছাপিয়ে ৬.১%।