প্রায় তিন বছর ধরে ই-ওয়েস্ট বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প নিয়ে গড়িমসি করার ফলে প্রকল্পের সময়সীমাই ফুরিয়ে গেল। বর্জ্য সংক্রান্ত নয়া আইন তৈরির মুখে কেন্দ্র এ ধরনের প্রকল্প কর্মসূচি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। ফলে আপাতত ই-বর্জ্য প্রকল্পে দাঁড়ি পড়ে গেল। আর্থিক টানাটানিতে থাকা পশ্চিমবঙ্গের এই খাতে কেন্দ্রীয় অনুদান পাওয়ার সম্ভাবনাও বাতিল হল।
কেন্দ্র, রাজ্য ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের ২৫ শতাংশ খরচ অনুদান খাতে দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের। ২৫ শতাংশ দিতে হত রাজ্যকে, বাকি ৫০ শতাংশ টাকা বেসরকারি বিনিয়োগকারীকে। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রের কাছে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানোর কথা ছিল রাজ্যের। কিন্তু সেই প্রস্তাবই কেন্দ্রকে দিতে পারেনি রাজ্য। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব বিশ্বনাথ সিংহ বলেন, ‘‘রাজ্য এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। এখন নতুন বর্জ্য আইন তৈরির কাজ চলছে। এই প্রকল্প আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। ফলে অনুদান দেওয়ার প্রশ্নই আর উঠছে না।’’
এই অনুদান হাতছাড়া হওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রকল্প পরিকল্পনা স্তরেই আটকে যাওয়ার কারণ সেই জমি। সামান্য দুই থেকে তিন একর জমির অভাবে রাজ্যে তৈরি হয়নি ই-বর্জ্য হাব। কলকাতার লাগোয়া জেলায় জমি পাওয়া যায়নি। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং হাওড়ায় জমি চেয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের চিঠি লেখে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। কিন্তু জমি প্রসঙ্গে তেমন সাড়া দেয়নি তিনটি জেলার প্রশাসনই। ফলে থমকে যায় ই-বর্জ্য প্রকল্প।
২০১২ সালেই এ রাজ্যে বৈদ্যুতিন বর্জ্য হাব তৈরির ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়। তবে পরিকল্পনা দানা বাঁধে ২০১৩ সালে। শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স-এর মতো বেসরকারি সংস্থার তরফ থেকে লগ্নির প্রস্তাবও আসে। প্রাথমিক ভাবে এই প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সূত্রে যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প তৈরির জন্য মাঠে নামে ওয়েবেল। আগ্রহী সংস্থার কাছ থেকে ইচ্ছাপত্র চায় তারা। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে পাঁচটি সংস্থা ইচ্ছাপত্র জমা দেয়। ইচ্ছাপত্র পাওয়ার পরে জমির অভাবে প্রকল্পের গতি থমকে যায়। ফলে কেন্দ্রের কাছে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠাতে পারেনি রাজ্য।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বৈদ্যুতিন বর্জ্য নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট। সেই তথ্য অনুযায়ী ই-বর্জ্যের পরিমাণের ভিত্তিতে বিশ্বে পাঁচ নম্বর স্থানে রয়েছে ভারত। এশিয়ায় চিন ও জাপানের পরেই রয়েছে ভারত। ২০১৪ সালে মোট ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরি হয়েছে দেশে। ই-বর্জ্য নিয়ে নতুন করে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সমস্যা সামলাতে রাজ্যগুলিকেও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
বছরে ৯৬,০০০ মেট্রিক টন নিয়ে বর্জ্য তৈরির তালিকায় মুম্বই শীর্ষে। দিল্লি তার পরেই, ৬৭,০০০ মেট্রিক টন। কলকাতা তুলনায় কম হলেও ৩৫,০০০ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য এখানেও পাওয়া যায়।