—প্রতীকী চিত্র।
চড়া মূল্যবৃদ্ধি যে দেশে পরিকাঠামো উন্নয়নের গতি ঢিমে করে দিচ্ছে, সেই বাস্তবকে তুলে ধরল সরকারের ভারতমালা প্রকল্প। এর আওতায় তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম জাতীয় সড়ক। সোমবার এক সমীক্ষায় মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার দাবি, বর্ধিত খরচই ভারতমালা পরিযোজনার (বিএমপি) কাজে সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির দাম বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। চড়েছে জমি অধিগ্রহণের খরচও। ফলে ইক্রার হিসাব মতো সার্বিক ভাবে ওই জাতীয় সড়ক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় লগ্নির অঙ্ক আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এখনকার হিসাবে খরচ পড়বে ১০.৬৪ লক্ষ কোটি টাকা।
ভারতমালায় দেশে ৩৪,৮০০ কিলোমিটার লম্বা জাতীয় সড়ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। খরচ ধরা হয়েছিল ৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় তা অতটা বাড়ায় শ্লথ হয়ে পড়েছে কাজ। ইক্রা জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে গত অর্থবর্ষের (২০২২-২৩) প্রথম সাত মাসে তৈরি হয়েছিল ৫০০৭ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক। চলতি অর্থবর্ষে একই সময়ে তৈরির হার ৪৮ শতাংশ কমে হয়েছে ২৫৯৫ কিলোমিটার। সমীক্ষায় আশঙ্কা, পুরো বছরের হিসাব ধরলে গত আর্থিক বছরের তুলনায় এ বার ৩০ শতাংশ রাস্তা কম তৈরি হবে।
প্রকল্পটিতে রাস্তা তৈরির তহবিল জোগানোর কথা সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের। তাই পরিকল্পনার তুলনায় খরচ বাড়ায় বাড়তি পুঁজির জন্য লাগবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সায়। ইক্রার ভাইস প্রেসিডেন্ট আশিস মোদানি বলেন, বাড়তি পুঁজির বন্দোবস্ত করে কাজ বহাল রাখতে মন্ত্রক টোল আদায়ের ভিত্তিতে ‘বিল্ট অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার’ (বিওটি) ব্যবস্থায় সড়ক নির্মাণের উপরে জোর দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। তিনি বলেন, “এর আগে ভারতমালা প্রকল্পে যতটা সড়ক তৈরি হয়েছে তার ৯৫ শতাংশই করা হয়েছে ‘হাইব্রিড অ্যানুইটি মোড’ (এইচএএম) এবং ‘ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোকিয়োরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন’ (ইপিসি) ব্যবস্থায়। এই দুই ব্যবস্থায় তৈরির খরচ পুরোটাই বইতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে। বিওটি ব্যবস্থায় যারা সড়ক তৈরির বরাত নেবে, তারা টোল আদায় করে খরচ তুলে নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে সড়ক আসবে সরকারের হাতে।’’
তবে তার পরেও রয়ে যাচ্ছে বিস্তর সংশয়। কারণে একই সঙ্গে মোদানি বলেন, তাঁরা দেখেছেন বিওটি ব্যবস্থায় সড়ক তৈরি করতে আগ্রহী সংস্থার সংখ্যা বাকি দুই ব্যবস্থার তুলনায় কম হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি আনার অন্যতম যে পথ, সেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে মূল্যবৃদ্ধি ঝাপ্টা উদ্বেগেই রাখছে দেশকে। সেই সঙ্গে ভোটের মরসুমে মোদী সরকারকেও।