প্রতীকী ছবি।
বর্ধমানের শেখ সাহাদাত হোসেনের মাথায় হাত। বারবার সেচের জল দিয়েও শুকিয়ে যাচ্ছে আমন ধানের বীজতলা। ওই জল যথেষ্ট নয় বলে। বৃষ্টি না হলে তাই ওই বীজতলা বাঁচানো কঠিন।
শুধু বর্ধমান বা পশ্চিমবঙ্গ নয়। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে চাষের এই করুণ ছবি দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই।
কৃষি মন্ত্রকের তথ্য বলছে, বৃষ্টির অভাবে দেশে খরিফ মরসুমে এখনও পর্যন্ত চাষ কম হয়েছে অন্তত ৭%। সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছে চাল ও ডালের চাষ। পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানায় আমন ধানের বীজ কম রোয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তথ্যও বলছে, বর্ষার ঘাটতি ১৮%। যার প্রভাব পড়েছে খরিফ চাষে।
মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২২ সালের মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার কথা ঘোষণা করেছেন। তার আর তিন বছর বাকি। এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে চাষের উৎপাদন ও চাষিদের আয় মার খেলে, ওই লক্ষ্যও ধাক্কা খাবে। এনসিএইআর (ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চ)-এর ডিরেক্টর জেনারেল শেখর শাহ বলেন, ‘‘চাল, ডাল, তৈলবীজ, জোয়ার, বাজরা—প্রায় সব ক্ষেত্রেই গত বছরের খরিফ মরসুমের তুলনায় এ বার কম চাষ হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে এবং সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতিতে এর কতখানি প্রভাব পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।’’ অর্থনীতিবিদদের চিন্তা, এমনিতেই বাজারে কেনাকাটায় ভাটার টান। তার উপরে খরিফ মরসুমে চাষিরা মার খেলে, গ্রামের বাজারে বিক্রিবাটা আরও ধাক্কা খাবে।
শেখর মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত এক দশকে কৃষিতে উৎপাদনের হার খুব সামান্য বেড়েছে। ২০০৭-০৮ সালে প্রতি হেক্টরে ১,৮৬০ কেজি খাদ্যশস্য উৎপাদন হত। ২০১৭-১৮ সালে তা ২,২৩৫ কেজিতে পৌঁছেছে। বছরে বৃদ্ধি মাত্র ১.৮৬%। তৈলবীজ, আনাজের ক্ষেত্রেও দেড়-দু’শতাংশের মধ্যে। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরে মোদী চাষিদের জন্য বছরে ৬ হাজার টাকা ‘উপহার’ ঘোষণা করেছেন। তার জন্য বরাদ্দ গত বছরের ২০ হাজার কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। শেখরের প্রশ্ন, এতে কি কৃষিতে উৎপাদনের হার বাড়বে?
উৎপাদনের হার যেহেতু বাড়ছে না, তাই কম জমিতে চাষ হলে কৃষিতে উৎপাদনও কম হবে। কৃষি মন্ত্রকের তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় পর্যন্ত ৬০৯ লক্ষ হেক্টরে খরিফ চাষ হয়েছিল। এ বার ৫৬৭ লক্ষ হেক্টরে। গত বছরের তুলনায় ৭% কম। ধানে ৯% কম জমিতে বীজ রোয়া হয়েছে। ডালের বীজ রোয়ার পরিমাণ প্রায় ১৬% কম। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও রাজস্থানে অড়হর, মুগ থেকে শুরু করে সব ডালেরই বীজ রোয়া হয়েছে কম। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশে তৈলবীজের চাষও কম হয়েছে।