নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
বাজেটে সাধারণত কোটি টাকা, লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের কথাই শোনা যায়। কিন্তু মাত্র ১ লক্ষ!
এ বারের বাজেটে এই টাকাই বরাদ্দ হয়েছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাতে গড়া বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালসের জন্য। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেঙ্গল ইমিউনিটির ভাগ্যেও জুটেছে একই পরিমাণ অর্থ। আর এই টাকা বেঙ্গল কেমিক্যালসের মতো লাভজনক সংস্থার কেন প্রয়োজন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে শুধু বেঙ্গল কেমিক্যালস বা বেঙ্গল ইমিউনিটি নয়। রাজ্যের আরও দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ব্রেথওয়েট, ব্রিজ অ্যান্ড রুফের ভাগ্যে জুটেছে এর থেকে কিছুটা বেশি, যথাক্রমে ১ কোটি ও ৩ কোটি টাকা। কলকাতার অ্যান্ড্রুইউল বাজেটে পেয়েছে ৩৮ কোটি এবং গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স ও বামা লরি পেয়েছে ৪০ কোটি টাকা করে।
বেঙ্গল কেমিক্যালসের এই সামান্য বাজেট বরাদ্দ নিয়ে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডার কাছে কারণও জানতে চেয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। যদিও তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। সংস্থার এমডি নীরজা শরাফের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। তবে সূত্রের খবর, এই বরাদ্দ নিয়ে কর্তৃপক্ষ ওয়াকিবহাল নন।
সৌগতের বক্তব্য, ‘‘বাজেটে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ বেঙ্গল কেমিক্যালসের পক্ষে খুবই কম। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাতে গড়া এই সংস্থায় ১ লক্ষ টাকা কী কাজে লাগবে বোঝা যাচ্ছে না। এটা কেন্দ্রের অন্যায়। এই বিষয়টি ইতিমধ্যেই তুলেছি। মন্ত্রী চিঠি লিখতে বলেছেন, শীঘ্রই তা জমা দেব।’’ পাশাপাশি, তাঁর মন্তব্য ১ লক্ষ বা ১ কোটি টাকার নামমাত্র বরাদ্দ প্রমাণ করে কেন্দ্র বাংলার সংস্থাগুলির সঙ্গে কী ভাবে বঞ্চনা করছে।
যদিও বিজেপি বিধায়ক তথা অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীর দাবি, ‘‘এটা প্রতীকি বরাদ্দ। কেন্দ্র সংস্থায় টাকা ঢালার পথ খুলে রাখল। পরে প্রয়োজন অনুসারে টাকা দেওয়া হতে পারে। এটা অনেক সংস্থার সঙ্গেই হয়। বঞ্চনার ব্যাপার নেই।’’ তবে বরাদ্দ নিয়ে গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে চাননি। বেঙ্গল ইমিউনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বেঙ্গল কেমিক্যালস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মৃণাল রায়চৌধুরীর অবশ্য তোপ, ‘‘এটা বাংলার, শিল্পের অপমান। সংস্থাকে বন্ধ করতে পারছে না বলেই এই ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে কেন্দ্র। সরকারের উচিত ছিল মূলধন দিয়ে সহায়তা করা।’’
বস্তুত, বেঙ্গল কেমিক্যালসের মতো সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে ২০০৬ সালে ইউপিএ সরকার ২০৭.২ কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা প্যাকেজ দিয়েছিল। মকুব করা হয় প্রায় ২৩৩.৪ কোটির ঋণও। তার পরেও ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় এক দশক লেগেছে ওষুধ সংস্থাটির। টানা ৫০ বছর লোকসানের পরে শেষ পর্যন্ত ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষ থেকে লাভের মুখ দেখছে তারা।