প্রতীকী ছবি।
গত কয়েক মাসে টানা সুদের হার বৃদ্ধির জেরে মাথাচাড়া দিয়েছে বাড়ি-গাড়ির মাসিক কিস্তি। সেই সঙ্গে কাঁচামালের দর বৃদ্ধির হাত ধরে তাদের দামও বেড়েছে। ফলে মাথার উপরে ছাদ জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ। মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে আরও সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। রেটিং সংস্থা ইক্রার অবশ্য দাবি, এই পরিস্থিতিতেও কিস্তি বাড়লে তা মেটাতে সে ভাবে সমস্যা হবে না গ্রাহকের। ফলে সংস্থাগুলির পোর্টফোলিয়ো-ও ঠিকই থাকবে। কিন্তু তা মানতে নারাজ বহু বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, করোনার জেরে যে হারে অসাম্য বেড়েছে দেশে, তাতে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মে থেকে মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে মোট ১৯০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে গহঋণের সুদও বাড়ায় চাপ বাড়ছে সাধারণ ক্রেতার উপরে। আবাসন শিল্প ও উপদেষ্টা সংস্থাগুলি বলছে, এ বছরে দেশে কোটি টাকার বেশি ফ্ল্যাটের বিক্রি বাড়লেও, কম দামি ফ্ল্যাটে তা সেই হারে বাড়েনি। বরং সুদ বাড়ায় বড় শহরগুলিতে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষমতা কমেছে। ইক্রার অবশ্য দাবি, সাধারণত সুদ বাড়লে ঋণের মেয়াদ বাড়ায় ঋণদাতারা। কিন্তু বর্তমানে সেই মেয়াদ এমনিতেই বেশি। তা আরও বাড়ালে ঋণগ্রহীতার অবসরের বয়সকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। ফলে হয়তো মাসিক কিস্তি বাড়াবে তারা। সে ক্ষেত্রে দামি বাড়ির ঋণের কিস্তি বাড়তে পারে ১২%-২১%। কমদামি আবাসনে ৮%-১৩%। কেউ মেয়াদ ও সুদ, দুই-ই পাল্টাতে পারে।
রেটিং সংস্থাটির পদস্থ আধিকারিক মনুশ্রী সাগরের মতে, আয়ের সাপেক্ষে বাড়ি ঋণের কিস্তি বাবদ খরচ ১০ শতাংশ বিন্দুরও কম বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ফলে তা আয়ত্তে থাকার কথা। তার উপরে আগামী দিনে আয় বাড়লে তার নিরিখে কিস্তির খরচ ততটা বাড়বে না। উপরন্তু আরবিআই ১৯০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ালেও, গৃহঋণ সংস্থাগুলিতে তা বেড়েছে ৫০-১০০ বেসিস পয়েন্ট। ফলে সুদ বৃদ্ধির পুরো প্রভাব মানুষের পকেটে পড়েনি। ফলে সংস্থাগুলির সম্পদও ঠিকই থাকবে।
ইক্রার রিপোর্টের সঙ্গে সহমত নন বিশেষজ্ঞেরা। পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিক বলেন, ‘‘বাড়তি সুদ ধরে হিসাব করলে সুদ-সহ মোট ঋণের অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, এমন নজির রয়েছে। গ্রাহক কিস্তি দিচ্ছেন মানে এই নয় যে, আর্থিক ভাবে তাঁরা অসুবিধায় পড়েননি। বেতন বাড়লেও সমস্ত জিনিসেরই দাম বেড়েছে। সংসার চালাতে অনেকেই হিসশিম খাচ্ছেন। বিশেষত সমস্যা বেড়েছে যাঁরা সুদ বৃদ্ধির আগে ঋণ নিয়েছেন। তাঁদের পুরো হিসাব গোলমাল হয়ে গিয়েছে।’’
সংশ্লিষ্ট মহল আরও মনে করাচ্ছে, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ যখন সমস্যায় পড়েছেন, তখনই এক শ্রেণির মানুষের হাতে এই সময়ে বিপুল টাকা এসেছে। সেই বৈষম্যই প্রতিফলিত হচ্ছে আবাসন বিক্রিতে। ঠিক যে ভাবে ছোট গাড়ির বিক্রি মার খেলেও, তুলনায় দামি গাড়ির চাহিদা বেড়েছে দেশে। তা ছাড়া অতিমারি বহু মানুষের রোজগার কেড়েছে। অনেকের বেতন কমেছে। এখনও সে ভাবে নতুন কর্মী নিয়োগ সে ভাবে হচ্ছে না। ফলে আগামী দিনে আয় বাড়বে ধরে কিস্তিতে অসুবিধা হবে না বলাটাও ঠিক নয়।