ফাইল চিত্র।
তেলের দাম যখন ফের নতুন রেকর্ড গড়েছে, তখন বাড়তি খরচের চাপে সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না মন্ত্রী। উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে সেই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ বাতলানো তো অনেক দূরের ব্যাপার। উল্টে বুধবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের দাবি, তেলের কর দেশের উন্নয়নের জন্য টাকা তোলার খুব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা রাজ্য, কেন্দ্র, দু’পক্ষের কাছেই। এখনই উৎপাদন শুল্ক কমানোর কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের। তবে তাঁর অভিযোগ, পেট্রল-ডিজেলের দাম সর্বকালীন উচ্চতায় বলে যাঁরা প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁরা আসলে ভুল ব্যাখ্যা করছেন। এটা অপপ্রচার। কারণ, দেশে এই দর ঠিক হয় বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল এবং পেট্রল-ডিজেলের দামের ভিত্তিতে। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার কলকাতায় পেট্রলের দাম ৮৯ টাকা ছাড়াল। ৮২ টাকার দিকে আরও এগোলো ডিজেল।
দেশের প্রায় সর্বত্র রেকর্ড দরে বিকোচ্ছে তেল। মুম্বইয়ে বুধবার লিটারে পেট্রল ৯৪ টাকা ছাড়িয়েছিল। কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে আজ তা আরও ২৪ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৮৯.১৬ টাকা। ডিজেল ৩০ পয়সা বেড়ে ৮১.৬১ টাকা।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর এখন অনেক কম থাকলেও দেশে তেল কেন এত চড়া, বুধবার রাজ্যসভায় সেই প্রশ্ন তোলেন সাংসদেরা। জবাবে তেলের সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছনোর ব্যাখ্যাকে প্রধান অপপ্রচার বলায় হতবাক অনেকেই। মন্ত্রীর অবশ্য দাবি, গত ৩০০ দিনের মধ্যে ৬০ দিন দাম বেড়েছে, ৭ দিন পেট্রলের ও ২১ দিন ডিজেলের দর কমেছে, ২৫০ দিন একই ছিল। ফলে যে দর বিশ্ব বাজারের উপরে নির্ভর করে, তা সর্বকালীন উচ্চতা পৌঁছেছে বলে প্রচার করা ভুল। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, প্রধান কী বলতে চেয়েছেন বোঝা যায়নি। কারণ এই মুহূর্তে দর তো রেকর্ড বটেই।
বিরোধীদের অভিযোগ, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ২০১৪ সালের প্রায় অর্ধেক। কাজেই মূলত উৎপাদন শুল্কের জন্যই দেশে তেল এত চড়া। পেট্রলের দামের ৬১% কর। ডিজেলে ৫৬%। অথচ আমজনতাকে সুরাহা দিতে সেই কর না-কমিয়ে, তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা বা আঙুল তোলায় অমানবিকতাই প্রকাশ পায়।
উল্লেখ্য, গত বছরে অশোধিত তেলের দাম শূন্যের নীচে নামার পরে পেট্রল-ডিজেলে শুল্ক বাড়িয়ে রাজকোষ ভরেছে কেন্দ্র। কিন্তু পরে অশোধিত তেলের দাম বাড়লেও কর কমায়নি। বরং বাজেটে অতিরিক্ত শুল্ক সামান্য কমালেও কৃষি পরিকাঠামো ও উন্নয়ন সেস চাপিয়ে দাম কমানোর রাস্তা আটকেছে।
প্রধান বার্তা, ‘‘কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যগুলিও ভ্যাট বাড়িয়েছে।’’ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও বলেছেন, কেন্দ্র শুল্ক কমাচ্ছে না কারণ, সেটা করলে রাজ্যগুলি নাকি কর বাড়িয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করবে!
আমজনতার প্রশ্ন, সরকার তা হলে মানুষের পাশে কবে দাঁড়াবে?