প্রতীকী ছবি।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে বিশ্বের প্রায় সব দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক এই মুহূর্তে সুদ বৃদ্ধির রাস্তায়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও তাতে শামিল। আগের দু’দফায় মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির পরে বাজারের অনুমান ছিল, এ বার রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) বাড়তে পারে ৩৫-৭৫ বেসিস পয়েন্ট। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি তা বাড়িয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট। ফলে রেপো বেড়ে হল ৫.৪০%। এই হার শেষ বার দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের অগস্টে। এই নিয়ে টানা তিন বারে মোট ১৪০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়াল আরবিআই।
রেপো রেট বাড়লে যা হয়, এ বারও তাই হবে। অর্থাৎ বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ধরনের ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে। ফলে চাপে পড়বে সেই সব শিল্প। ঋণের কিস্তির খরচ বেড়ে ধাক্কা দেবে বহু মধ্যবিত্তের মাসের বাজেটে। মাথা নামাবে চাহিদা। কোপ পড়তে পারে শিল্প বৃদ্ধির হারে। আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আরও বাড়ানো হতে পারে সুদ।
যদিও চলতি অর্থবর্ষে ভারতের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির আনুমানিক হার ৭.২ শতাংশেই ধরে রেখেছে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাদের অনুমান, বছরের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) মূল্যবৃদ্ধি নামবে ৬ শতাংশের নীচে (বর্তমান হার ৭.১%)। বাজারের আশা জাগিয়ে আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, বিশ্ব জুড়ে কঠিন পরিস্থিতি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার মোকাবিলা বেশ ভাল ভাবেই করছে ভারত। তাঁর কথায়, ‘‘অস্থির এবং অনিশ্চিত সমুদ্রে ভারত যেন একটি স্থিতিশীল দ্বীপ।’’ চড়া দামের সঙ্কট থেকে বেরোনোর আশায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে থাকা সকলকে গভর্নরের বার্তা, মূল্যবৃদ্ধির হার এ দেশে শীর্ষে পৌঁছেছে। এ বার তারা নামার পালা।
আরবিআইয়ের এই সব ইঙ্গিতে সুদ এতখানি বাড়লেও মুষড়ে পড়েনি শেয়ার বাজার। এর ফলে ওই দিন সেনসেক্স ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছে ৫৮,৩৮৮ অঙ্কে। তবে বেড়ে ওঠে বন্ডের ইল্ডও। বাজারে বন্ডের দাম পড়ায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড দু’দিন আগের ৭.১৫% থেকে বেড়ে স্পর্শ করে ৭.৩০%।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ঋণে সুদ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করতে শুরু করেছে কোনও কোনও ব্যাঙ্ক। সুদ নির্ভর মানুষের অভিযোগ, ঋণে যে পরিমাণ সুদ বাড়ানো হয়, সেই অনুপাতে তা বাড়ে না আমানতে। জিনিসের দাম বাড়লেও ব্যাঙ্কে জমা টাকার সুদ থেকে আয় বাড়ে না। এর জন্য সব থেকে বেশি ভুগতে হয় স্বল্প বিত্তের এবং প্রবীণ মানুষকেই।
মূল্যবৃদ্ধি প্রবল চড়া আমেরিকা এবং ব্রিটেন-সহ বিশ্বের বহু দেশে। আমেরিকায় ফেডারাল রিজ়ার্ভ সম্প্রতি আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানোর পরে ব্রিটেনের শীর্ষ ব্যাঙ্কও সেই পথে হেঁটেছে। ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড সুদের হার বাড়িয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট, যা ১৯৯৫ সালের পরে বৃহত্তম বৃদ্ধি। যে ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি এগোচ্ছে, তাতে কিছু দিনের মধ্যেই অনেক দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জুলাইয়ে পতন ঘটেছে পরিষেবা শিল্প পিএমআই সূচকের। জুনের ৫৯.২ থেকে তা নেমে এসেছে ৫৫.৫ পয়েন্টে। চার মাসে সব থেকে কম। যদিও তা এখনও বৃদ্ধির পথেই রয়েছে। এই সূচক ৫০-এর উপরে থাকা বৃদ্ধির ইঙ্গিত, নীচে হলে সঙ্কোচন।
এ দিকে, এপ্রিল-জুন, এই তিন মাসে স্টেট ব্যাঙ্কের লাভ কমেছে ৭%। ৬৫০৪ কোটি টাকা থেকে তা নেমেছে ৬০৬৮ কোটিতে। ব্যাঙ্কের হাতে থাকা বন্ডের বাজার দরের পতনই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের গাড়ি নির্মাতা মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রার নিট লাভ ৬৭% বেড়ে ছুঁয়েছে ১৪৩০ কোটি টাকা। ২২% বেড়ে ইউকো ব্যাঙ্কের লাভ পৌঁছেছে ১২৩ কোটিতে। পেটিএমের লোকসানের বহর আরও বেড়ে হয়েছে ৬৪৪ কোটি টাকা। গ্যাস অথরিটির লাভ বেড়েছে ৫১%, ব্রিটানিয়ার কমেছে ১৩%। ৩১৭৪ কোটি টাকা থেকে ইন্ডিগোর ক্ষতি নেমেছে ১০৬৪ কোটি টাকায়। প্রায় একই জায়গায় আছে (৭২৯৬ কোটি টাকা) ভোডাফোন আইডিয়ার লোকসান।
(মতামত ব্যক্তিগত)