Foreign investment

বিদেশি লগ্নিতে নির্ভরতা ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে বাজারে

চিন্তার বিষয় হল, ক’দিন ধরে দেশের শেয়ার বাজারকে ছুটতে দেখা গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তার তেমন সঙ্গত কোনও কারণ ছিল না বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৭:৪১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

জুন মাসের ২৭ তারিখ থেকে সেনসেক্স পর পর নজির ভাঙার যে দৌড় শুরু করেছিল, তা শেষে গোঁত্তা খেয়েছে গত শুক্রবার। মাত্র সাতটি লেনদেনে এই সূচক নিট ২৮১৬ পয়েন্ট বেড়ে বৃহস্পতিবার পৌঁছোয় নজিরবিহীন উচ্চতায় (৬৫,৭৮৫)। এই যাত্রাপথে টানা পাঁচ বার পুরনো উচ্চতাকে পিছনে ফেলে রেকর্ড গড়েছে এটি। তবে শুক্রবার ৫০৫ খুইয়ে দাঁড়ায় ৬৫,২৮০-তে। টানা আট দিনে মোট ৮৩২ পয়েন্ট বেড়ে যে নিফ্‌টি ১৯,৪৯৭ অঙ্কে পৌঁছেছিল, তা সপ্তাহ শেষ করে ১৯,৩৩১-এ।

Advertisement

চিন্তার বিষয় হল, ক’দিন ধরে দেশের শেয়ার বাজারকে ছুটতে দেখা গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তার তেমন সঙ্গত কোনও কারণ ছিল না বলে মনে করা হচ্ছে। উত্থানে মূলত মদত জুগিয়েছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। এ দেশে ঢেলে শেয়ার কিনেছে তারা। ফলে নগদ জোগান বেড়েছে বাজারে। শুক্রবারও সংস্থাগুলি ছিল ক্রেতার ভূমিকায়, যখন লাভের টাকা ঘরে তোলার তাগিদে হাতের শেয়ার বেচতে ব্যস্ত ছিলেন বহু মানুষ। তবে বিদেশি লগ্নির উপর নির্ভর করে সূচকের এই উত্থান আদতে ঝুঁকির। আচমকা এই লগ্নি সরে গেলে মুষড়ে পড়বে শেয়ার বাজার। ক্ষতির মুখে পড়বেন দেশীয় লগ্নিকারীরা। শুক্রবার সূচক নামে বিশ্ব বাজারের দুর্বলতা এবং আমেরিকায় ফের সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কাতেও।

আসলে ভারতীয় অর্থনীতিতে রাতারাতি এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, যাতে ভর করে মাত্র সাত দিনে সেনসেক্স প্রায় তিন হাজার পয়েন্টের লাফ দেবে। বরং বাজারে ফের খাদ্যপণ্যের দাম চড়ছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, ৪ শতাংশের কাছাকাছি নামা মূল্যবৃদ্ধির আবার মাথা তোলার। তবে বাজার আশঙ্কার দিকগুলি উপেক্ষা করেই এগিয়েছে।

Advertisement

তবে এত বিদেশি লগ্নির পরেও দেশে ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে ৮২.৭৪ টাকা। রফতানি বাণিজ্য কমে যাওয়া যার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইউরোপ এবং আমেরিকার অর্থনীতি দুর্বল হলে, তা ভারতের পক্ষে শুভ নয়। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বর্ষা পৌঁছলেও, তাতে সমতা নেই। সামগ্রিক ভাবে বৃষ্টির ঘাটতি ৩ শতাংশে নেমেছে। তবে পরিসংখ্যানে ২৪% ঘাটতি দেখাচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবং ১৬% পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে। অতিবর্ষণে ভেসেছে উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের কিছু রাজ্য।

মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা তুললে সুদ আবার বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় গত কয়েক দিনে বেশ খানিকটা বেড়েছে বন্ড ইল্ড। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড জুনে মাসে ৭ শতাংশে নেমে এসেছিল। তা গত শুক্রবার ফের ৭.১৫ শতাংশে উঠেছে। বাজারে বন্ডের দাম কমলে, ইল্ড বাড়ে। অর্থাৎ এর ফলে ন্যাভ কমে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডের। ইল্ড বাড়লে সরকারের ঋণের উপর সুদ বাবদ খরচও চড়ে।

আর কয়েক দিনের মধ্যেই জোর কদমে শুরু হয়ে যাবে সংস্থাগুলির গত এপ্রিল-জুনের আর্থিক ফল প্রকাশের পালা। আশা, এ বার তেল শোধন এবং বিপণন সংস্থাগুলি অনেকটা উন্নত ফলাফল উপহার দেবে তাদের সদস্য অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডাদের। অশোধিত তেলের দাম কমা এবং রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার ফায়দা তুলবে ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি), এইচপিসিএল এবং বিপিসিএলের মতো সরকারি তেল সংস্থা। লাগাতার সস্তায় অশোধিত তেল কিনলেও, দীর্ঘ দিন ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা পেট্রল এবং ডিজ়েলের দাম কমানোর ব্যাপারে নিশ্চুপ তারা। অথচ ভারতের সেই জ্বালানিগুলির দর এখনও যথেষ্ট উঁচুতে। অন্যান্য সংস্থা কেমন ফলাফল প্রকাশ করে তার উপরে কিছুটা নির্ভর করবে ছোট মেয়াদে বাজারের দিশা।

আগামী দিনে জমে উঠতে চলেছে প্রথম বার শেয়ার বিক্রি (আইপিও) করে টাকা তোলার জন্য বহু সংস্থার নতুন ইসুর বাজার। ২২,০০০ কোটি টাকার রাইটস ইসু (সংস্থার শেয়ারহোল্ডাররাই শুধু যে শেয়ার কিনতে পারেন) আনার কথা ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি)। গত মাসে বিপিসিএল পর্ষদও অনুমতি দিয়েছে ১৮,০০০ কোটি টাকার রাইটস ইসু বাজারে আনার। একই ধরনের ঘোষণা আশা করা হচ্ছে এইচপিসিএলের থেকেও। অন্য দিকে, ৫ কোটি ৭২ লক্ষ ৬০ হাজার ১টি শেয়ার বিক্রি করে টাকা তোলার জন্যে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির দফতরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে দেশের বৃহত্তম ডিপোজ়িটরি (যারা লগ্নিকারীর শেয়ার জমা রাখে) এনএসডিএল। দারুণ সাড়া মিলেছে কলকাতার সেনকো গোল্ডের ৪০৫ কোটি টাকার আইপিও-তে। গত সপ্তাহে বন্ধ হওয়া এই ইসুতে আবেদন জমা পড়েছে প্রয়োজনের ৭৩.৩৪ গুণ। আশা, নথিবদ্ধ হলে এই শেয়ারের ভাল দাম পাবেন সফল আবেদনকারীরা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement