Gold Loan

প্রয়োজন মেটাচ্ছে ঘরের সোনা, বাড়ছে স্বর্ণঋণ

বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দারের মতে, এ দেশে সোনাকে অসময়ের সঙ্গী হিসেবে দেখা হয়। বেশির ভাগ মানুষ খুব বিপাকে না পড়লে ঘরের সোনা বাইরে বার করতে চান না। বিক্রি তো নয়ই।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এক দিকে বাজারে খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের চড়ে যাওয়া দাম। অন্য দিকে বাড়তে থাকা খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোজগার বৃদ্ধি না হওয়া কিংবা কমে যাওয়া। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে স্বল্প ও সাধারণ আয়ের বহু মানুষের। সূত্রের খবর, এই অবস্থায় বিপুল বেড়ে যাওয়া সোনার দামই বড় ভরসা হয়ে উঠেছে একাংশের কাছে। কেউ ঘরের সোনা বেচে টাকা জোগাড় করছেন। কেউ তা বন্ধক রেখে ধার নিচ্ছেন বেশি। তবে বাড়িতে বিয়ের মতো অনুষ্ঠান থাকলে মাথায় হাত পড়ছে কারও কারও। যে কারণে পুরনো গয়না দিয়ে নতুন কেনার ঝোঁক বেড়েছে বলে দাবি স্বর্ণ শিল্পমহলের।

Advertisement

বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দারের মতে, এ দেশে সোনাকে অসময়ের সঙ্গী হিসেবে দেখা হয়। বেশির ভাগ মানুষ খুব বিপাকে না পড়লে ঘরের সোনা বাইরে বার করতে চান না। বিক্রি তো নয়ই। বন্ধক রেখে ধার নেওয়ারও পক্ষপাতী নন অনেকে। বরং বংশ পরম্পরায় তার হাতবদল হওয়াটাই দস্তুর। কিন্তু খরচ সামাল দিতে না পারার সঙ্কট একাংশকে এতটাই ধাক্কা দিয়েছে যে সেই সব প্রথা ভাঙতে দেখা যাচ্ছে বেশি, দাবি তাঁর।

যেমন, নদিয়ার ফতেপুরের অবনি নস্কর। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘সমস্ত জিনিসেরই দাম মাত্রাছাড়া গতিতে বেড়েছে। সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। ঘরে বেশ কিছু গয়না ছিল। দাম এত চড়া যে, সেগুলি বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা পেয়েছি। ওই টাকা ডাকঘরে মাসিক আয় প্রকল্পে লাগিয়েছি। মাসে মাসে আয়ের ব্যবস্থা হলে একটু নিশ্চয়তা আসে।’’

Advertisement

কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম খুচরো সোনার দাম এখন ৬৩ হাজার টাকার উপরে। বোনের বিয়ের গয়না গড়াতে তাই ঘরের পুরনো গয়না বিক্রি করেছেন ইছাপুরের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার ঠাকুমার আমলের প্রায় ৬০ বছরের পুরনো গয়না বিক্রি করতে হল। সোনার দাম যেখানে উঠেছে, তাতে নতুন গড়ানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু বিয়ের জন্য গয়নার ব্যবস্থা তো করতেই হবে। তাই বাধ্য হয়ে পুরনোয় হাত দিলাম। ওগুলোর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বলেই এত দিন আগলে রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর সম্ভব হল না।’’

নতুন সোনা দিয়ে গয়না তৈরির ঝোঁক বিশেষত মফস্‌সলে কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে দাবি ওই সব অঞ্চলের বহু গয়না ব্যবসায়ীর। তাঁদেরই একজন হরিণঘাটার কার্তিক চন্দ্র সিংহ। বলছেন, ‘‘প্রায় ৭০% গয়না তৈরি হচ্ছে পুরনো সোনা দিয়ে। এর ফলে আমাদের ব্যবসাও মার খাচ্ছে।’’

স্বর্ণঋণ সংস্থা মুথুট ফিনান্সের এমডি জর্জ আলেকজ়ান্ডার মুথুট জানিয়েছেন, গত তিন বছর ধরে গয়না বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা দ্রুত বেড়েছে ভারতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সংস্থায় তিন বছরে স্বর্ণঋণ বেড়েছে ৬৬%। গত ২০২০-র মার্চে ছিল ৪০,৭৭২ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৬৭,৫১৭ কোটি। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে (গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) স্বর্ণঋণ নেওয়ার নতুন গ্রাহক যে ভাবে বেড়েছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। ওই সময়ে আমরা শুধু নতুন গ্রাহকদেরই সোনা বন্ধক রেখে ঋণ দিয়েছি ৮১০৯ কোটি টাকার।’’

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সংসার খরচ-সহ দৈনন্দিন অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর পরে কোনও কিছুর জন্য বাড়তি চাহিদা মেটানোর মতো নগদ সাধারণ মানুষের হাতে কমেছে বা নেই। অথচ সোনার দাম বেড়েছে। ফলে বাড়িতে তা থাকলে সেটা ভরসার। দাম বেড়ে যাওয়ায় তা জমিয়ে না রেখে বন্ধক দিলে বেশি ধার পাওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকেই স্বর্ণঋণের ঝোঁক বেড়েছে। ব্যবসা-সহ নানা কাজে সেই টাকা ব্যবহার করছেন তাঁরা। মুথুট কর্তার দাবি, ‘‘অনেকে আবার বন্ধক রাখা পুরনো গয়নার উপরই ঋণের পরিমাণ (টপ আপ) বাড়াচ্ছেন। সোনার দাম বৃদ্ধি তাঁদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ, দাম বাড়ার ফলে বাড়তি ঋণ নিতে অতিরিক্ত সোনা বন্ধক রাখতে হচ্ছে না।’’

আর এক স্বর্ণঋণ সংস্থা আইআইএফএল ফিনান্সের আঞ্চলিক কর্তা নিলয় ঘোষ জানান, তাঁদের সংস্থায় গত এক বছরে গয়না বন্ধক রেখে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩৩%।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement