প্রতীকী চিত্র।
অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বার বার দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী ও প্রশাসনের আমলারা। বৃহস্পতিবার সেই দাবি আরও জোরালো হল বিদেশি লগ্নি ও কর্পোরেট কর জমার পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে। কারণ, কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সংস্থাগুলির আগাম কর্পোরেট কর জমার পরিমাণ এক লাফে ৪৯% বেড়ে ছাড়িয়েছে ১.০৯ লক্ষ কোটি টাকা। আর সরকারের শিল্পোন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য দফতরের সচিব গুরুপ্রসাদ মহাপাত্রের দাবি, ভারতে বিদেশি প্রত্যক্ষ লগ্নিও করোনার মধ্যেই দ্রুত বাড়ছে কেন্দ্রের বিভিন্ন সংস্কারকে হাতিয়ার করে। যার অন্যতম অঙ্গ কর্পোরেট কর ছাঁটাই, জিএসটি, দেউলিয়া আইন ইত্যাদি। অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) ওই লগ্নি ১৫% বেড়ে হয়েছে ৩০০০ কোটি ডলার (প্রায় ২,২৩,২০০ কোটি টাকা)।
বিরোধী ও সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের অবশ্য পাল্টা দাবি, এখনই অর্থনীতি ছন্দে ফিরছে বলার সময় আসেনি। তাদের যুক্তি, গত অর্থবর্ষে কেন্দ্র কর্পোরেট করের হার বিপুল কমানোয় সে বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সংস্থাগুলির জমা পড়া আগাম কর অনেক কম ছিল, ৭৩,১২৬ কোটি টাকা। তার ভিত্তিতেই এ বারের জমা অনেকটা বেশি লাগছে।
পাল্টা যুক্তি হিসেবে তারা তুলে ধরছে দেশের বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির ডিজেলের বিক্রি কমার হিসেবকেও। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ দুয়েকের হিসেব অনুযায়ী যে ঘাটতি প্রায় ৫%। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, ডিজেলের সঙ্গে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্পর্ক নিবিড়। এই জ্বালানির চাহিদা যতদিন বাড়ার পথ না-নিচ্ছে, ততদিন আর্থিক কর্মকাণ্ড ছন্দে ফিরছে বলা যাবে না।
সম্প্রতি সরকারের দাবিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলে প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত অনিশ্চিত’ এবং চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি প্রায় ১০% সঙ্কুচিত হতে পারে। কারণ, এই মন্দার পরিস্থিতি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এ দিন সরকারি সূত্রের হিসেব বলছে, আগের বছরের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে ব্যক্তিগত আগাম আয়কর কিন্তু ৫.৬% কমে হয়েছে ৩১,০৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত তা ১০.৪% কমে দাঁড়িয়ে ৬০,৪৯১ কোটি টাকায়।