উদ্বিগ্ন আমানতকারীরা। ছবি- রয়টার্স।
ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তার জেরে ইয়েস ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম পড়ে গেল ৮৫ শতাংশ। বেশ কয়েকটি জায়গায় ইয়েস ব্যাঙ্কের এটিএম এবং নেট ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আমানতকারীরা। তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ‘‘আমানতকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তাঁদের যাবতীয় আমানত সুরক্ষিত থাকবে।’’ একই কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রমনিয়ন ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও।
শুক্রবার সকালে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রতিটি শেয়ারের দাম নেমে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ টাকা ৬৫ পয়সায়। যা বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধ হওয়ার সময় ছিল ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা।
প্রতিবাদে সরব রাহুল, চিদম্বরম
ইয়েস ব্যাঙ্কের এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। শুক্রবার তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘‘নো ইয়েস ব্যাঙ্ক (ইয়েস ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ অন্ধকার)। প্রধানমন্ত্রী মোদী আর তাঁর চিন্তাভাবনাগুলিই ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’’
ইয়েস ব্যাঙ্কের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। তাঁর টুইটে চিদম্বরম লিখেছেন, ‘‘ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সার্বিক ব্যর্থতাই এর জন্য দায়ী। ৬ বছর ক্ষমতাসীন বিজেপি যে এ ব্যাপারে ব্যর্থ, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এটাই শেষ নাকি এমন ঘটনা আরও ঘটতে চলেছে? যদিও সরকার মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। আমানতকারীরা কী করেন, জানার অপেক্ষায় থাকলাম। তাঁরা নিশ্চয়ই পিএমসি ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের মতোই গভীর উদ্বেগে রয়েছেন।’’
পুনরুজ্জীবিত হবে ইয়েস ব্যাঙ্ক, আশ্বাস আরবিআই গভর্নরের
ও দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ইয়েস ব্যাঙ্ককে দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও প্রশান্ত কুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইয়েস ব্যাঙ্কের পুনরুজ্জীবন ঘটানো। যে যে ভাবে তা করা সম্ভব, সেই সবক’টি উপায়েই ইয়েস ব্যাঙ্ককে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।’’
আরও পড়ুন- তোলা যাবে না ৫০ হাজারের বেশি, ইয়েস ব্যাঙ্কে টাকা তোলায় নিয়ন্ত্রণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের
আরও পড়ুন- করোনা, ইয়েস ব্যাঙ্কের খবরে প্রভাব শেয়ার বাজারে, সেনসেক্স পড়ল ১০০০ পয়েন্ট
কেন্দ্র কী চাইছে?
সূত্রের খবর, কেন্দ্র চাইছে স্টেট ব্যাঙ্ক ও এলআইসি মিলে ইয়েস ব্যাঙ্কের মোট ৪৯% অংশীদারি হাতে নিক। সেই এলআইসি, যাদের কাঁধে এর আগে লোকসানে ডোবা আইডিবিআই ব্যাঙ্ককেও চাপানো হয়। ফলে প্রশ্ন ওঠে, সংস্থায় পলিসিহোল্ডারদের টাকার সুরক্ষা নিয়ে।
এক নির্দেশিকা জারি করে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে গ্রাহকদের টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা সাময়িক বেঁধেছে আরবিআই। জানিয়েছে, ৩ এপ্রিলের মধ্যে আমানতকারীরা ৫০,০০০ টাকার বেশি তুলতে পারবেন না। ড্রাফট বা পে-অর্ডারের ক্ষেত্রে অবশ্য এই ঊর্ধ্বসীমা কার্যকর হবে না। টাকা তোলা যাবে অসুস্থতা, পড়াশোনা বা বিয়ের জন্য। দেওয়া যাবে ২০,০০০ কর্মীর বেতনও। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কোনও ঋণ দিতে পারবে না ব্যাঙ্কটি। ইয়েস ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএফও প্রশান্ত কুমারকে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ব্যাঙ্কটির সম্পদের পুনর্গঠন করে আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
কেন এই পদক্ষেপ?
গত দু’বছর ধরেই পরিচালন ব্যবস্থা এবং মূলধনের অবস্থা নিয়ে ইয়েস ব্যাঙ্ক নাকানিচোবানি খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করাচ্ছেন, বছর দু’য়েক আগে থেকেই ব্যাঙ্কে পরিচালনা ও ঋণ নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। এই অবস্থায় তৎকালীন সিইও রানা কপূরকে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। পরবর্তী সিইও রবনীত গিলের সময়ে ব্যাঙ্কটি বিপুল অঙ্কের অনাদায়ি ঋণের কথা জানায়। এমনকি, গত বছরই জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে প্রথম বার ক্ষতির মুখে পড়ে তারা। ডিসেম্বরে শেষ ত্রৈমাসিকে সংস্থার আর্থিক ফলাফল জানাতেও দেরি হয়েছিল তাদের। পুঁজি সংগ্রহের প্রক্রিয়াও ধাক্কা খাচ্ছিল বারবার।
এর আগে এ দিন সকালে খবর ছড়ায়, পুঁজি ঢেলে ইয়েস ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গোষ্ঠীকে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্র। শীঘ্রই হতে পারে ঘোষণা। এর পরেই ইয়েস ব্যাঙ্কের শেয়ার দর প্রায় ২৫% বাড়ে। যদিও স্টেট ব্যাঙ্ক ও ইয়েস ব্যাঙ্ক তখন খবরের সত্যতা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি। এ দিন মুম্বইয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের পর্ষদ বৈঠক ছিল। অনেক রাতে ব্যাঙ্কটি জানায়, ইয়েস ব্যাঙ্কে পুঁজি ঢালার ক্ষেত্রে সম্মতি দিয়েছে পর্ষদ।